বঙ্গ রাজনীতির চানক্য মুকুল রায় কি ফিরছেন তৃণমূলে? শেষ পর্ব। #Exclusive

নিজস্ব প্রতিনিধি, নজরবন্দি.ইন

অর্ক সানা, সম্পাদক(নজরবন্দি):বঙ্গ রাজনীতির চানক্য মুকুল রায় কি ফিরছেন তৃণমূলে? কিছুটা ইঙ্গিত দেওয়ার চেষ্টা করেছি এই লেখার আগের দুটো পর্বে। আজ তৃতীয় অর্থাৎ শেষ পর্ব। ফেরা যাক প্রসঙ্গে, মনে রাখতে হবে কোন দলের হাতে ক্ষমতা আসতে গেলে লাগে জন সমর্থন, পশ্চিমবঙ্গে সরপঞ্জ না থাকলেও এলাকার দাদা বাম-তৃনমূল সব আমলেই দেখা যায়। দাদারা জামা বদলে ফেললেই ক্ষমতার হস্তান্তর। নতুন ভোটার গজিয়ে ক্ষমতাসীন দলকে হারানো যায়না, বরং পুরোনো ভোটাররা মন পরিবর্তন করলেই ক্ষমতার পরিবর্তন হয়। একটু অতীতে ফেরা যাক, ২০০৮ সাল। বাম জমানার পতনের শুরু, সাথে জামা বদলের শুরু সেখান থেকেই। হাতে নাতে ফল ২০০৯ লোকসভা নির্বাচনে। ইঙ্গিত পাওয়া গেল ২০১১য় বাম দুর্গ পতনের। বাকিটা ইতিহাস, সবাই জানেন।

আরও পড়ুনঃ তৃণমূলে ফিরছেন মুকুল রায়? কিভাবে খুলছে জট? দ্বিতীয় পর্ব।

যে দলকে পশ্চিমবঙ্গবাসী একবার ক্ষমতাচ্যুত করেছে তাঁরা আর মসনদে ফেরেনি বলছে ইতিহাস। কংগ্রেস তাঁর সব থেকে বড় প্রমাণ। কংগ্রেস নেতৃত্বের ওপর বীতশ্রদ্ধ মমতা বন্দোপাধ্যায় দল ছেড়ে বেরিয়ে জন্ম দিয়েছিলেন তৃণমূলের। মানুষ না বদলালেও বদলেছিল সিম্বল। জনগন কিন্তু লালদূর্গ ধ্বংস করতে হাত ছেড়ে হাত ধরেছিল ঘাসফুলের। অভুতপূর্ব জনসমর্থন, যা যেকন দলের কাছে স্বপ্নের মত। বলাবাহুল্য দল গঠনের প্রথম দিন থেকেই মমতা বন্দোপাধ্যায়ের ছায়া সঙ্গী ছিলেন মুকুল রায়। একজন সাংবাদিকের মূল্যায়ন থেকে বলতে পারি এতটা ভরসা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোনদিন কাউকে করেন নি যতটা মুকুল রায় কে করতেন। সেই ভরসা কি এখন আর সামান্যও বেঁচে নেই? কোটি টাকার প্রশ্ন।

দলের মুখ মমতা আর সংগঠক মুকুল। এই কম্বিনেশন সাধারণত দক্ষিনপন্থী দলে দেখা যায় না। কিন্তু এই কম্বিনেশনের ফলই ছিল জন্মের মাত্র ১৩ বছরের মাথায় একটি দল কোন রাজ্যের ক্ষমতার মসনদে বসেছে ভোটে জিতে! পৃথিবীতে এমন দৃষ্টান্ত বোধ হয় বিরল। এদিকে এখন লক্ষ্য ২০২১ বিধানসভা নির্বাচন; রাজ্যের যুযুধান দুই প্রতিপক্ষ ইতিমধ্যেই নেমে পড়েছে ভোট ময়দানে। এই যুযুধান দুই প্রতিপক্ষ হল তৃণমূল আর বিজেপি। রাজ্যের বিয়াল্লিশ টি আসনের মধ্যে গত লোকসভা নির্বাচনে ১৮টি আসন পেয়ে টগবগ করে ফুটছে গেরুয়া ব্রিগেড। সমর্থকরা অপেক্ষমান আর তো মাত্র কয়েকমাস! তারপরেই বাংলার মসনদে বসছে বিজেপি। অনেকে আবার মনে মনে মন্ত্রীসভা গঠন করে ফেলেছেন! করোনা হানার পূর্বে একটি সভায় আগে অমিত শাহ তো মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন সেই ভবিষ্যতবাণীও করেই ফেলেছেন ইঙ্গিতে। তার পরেই শুরু হয়ছে বাবু যত বলে পারিষদ দলে বলে তার শতগুণ!

আরও পড়ুনঃ বিজেপি-কে নির্মূল করে তৃণমূলেই ফিরবেন চানক্য? কেন? আজ প্রথম পর্ব

কে কোন আসনে দাঁড়াবেন তার জন্যে লোকাল নেতারা যোগাযোগ এবং তৈল মর্দন করতে শুরু করেছেন নিজের পরিচিত সার্কেলের বিজেপি নেতাদের। লোকসভার অঙ্কে বিজেপি রাজ্যের ১২১ টি আসনে এগিয়ে থাকলেও ম্যাজিক ক্রশ করা যে সহজ হবে না তা বুঝিয়ে দিয়েছে সাম্প্রতিক দিল্লির নির্বাচন। দিল্লিতে লোকসভার সব আসনে জয় পেয়ে এবং ৭০ আসনের বিধানসভায় ৬৫ আসনে এগিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত মাত্র ৮টি আসন পেয়ে দিল্লি বিধানসভায় থেমে গেছে বিজেপি-র বিজয়রথ। বিজেপি-র প্রচারে কখনই প্রাধান্য পায়নি কর্মসংস্থান, স্বনির্ভরতা বা উন্নয়নের ইস্যু। সর্বদাই বিজেপি-র প্রচার কৌশল নির্ভর করে দেশপ্রেমের জিগির, চিন, পাকিস্তান বা দেশদ্রোহী ইস্যুর ওপর। কমবেশি সব বিজেপি নেতাই বোঝানোর চেষ্টা করেন তাঁরা দেশপ্রেমিক আর বিজেপি বিরোধীরা দেশদ্রোহী! মুশকিল হল মুকুল রায়ের বক্তব্যে কখনোই এই গুলো উঠে আসেনি।

এদিকে মুকুল রায়ের মত দক্ষ সংগঠক কে একাধিকবার পরীক্ষা দিতে হচ্ছে তিনি আজও কতটা কার্যকর। পঞ্চায়েত বা লোকসভায় সেই পরীক্ষা সাফল্যের সাথে পাশ করেছেন মুকুল। তবে পাশ করলেও প্রমোশন হয়নি। বিজেপি নেতৃত্ব আকারে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিয়েছে মুকুল রায় কে আরও একটা পরীক্ষা দিতে হবে। সেটা হল ২০২১ নির্বাচনে বাংলার মসনদে বিজেপি কে বসানো। ভোটের অঙ্ক কি বলছে সে হিসেব দূরে রেখে যদি মুকুলের চোখ দিয়ে দেখা যায় তাহলে কি দেখা যেতে পারে? ধরা যাক মুকুল রায় সর্বশক্তি দিয়ে বিজেপি কে ক্ষমতায় নিয়ে এলেন। কিন্তু তাঁর প্রাপ্তি কি হবে? মুখ্যমন্ত্রীর আসন মিলবে না তা বলাই বাহুল্য। তবে কি রাজ্যের মন্ত্রী? সেটা নিয়ে মুকুল রায়ের মত নেতা কি করবেন যিনি আগে ভারতীয় রেল মন্ত্রকের ক্যাবিনেট মন্ত্রী ছিলেন! তাহলে কি বিজেপি রাজ্য সভাপতি? এখানে প্রশ্ন এসে যায় বিজেপি কি আরএসএস বহির্ভূত কাউকে সভাপতি করবে?

বঙ্গ রাজনীতির চানক্য মুকুল রায় কি ফিরছেন তৃণমূলে? সবকিছু বিশ্লেষণ করলে অঙ্ক বলে মুকুলের জন্যে তৃণমূলই শ্রেষ্ঠ যায়গা। কিন্তু সমস্যা কি নেই? নিন্দুকে বলে বিজেপি ওয়াসিং মেশিনের মত। অর্থাৎ কাদা জামা বিজেপিতে গেলে পরিষ্কার। নারদায় প্রকাশ্যে ঘুষ নেওয়ার ভিডিও প্রকাশ পাওয়ার পরেও সংসদের এথিকস কমিটি কার্যত কিছুই করেনি। সিবিআই সারদা বা চিটফান্ড তদন্তকে ঝুলিয়েই রেখেছে! শঙ্কু বা শোভনের মত নেতাদের রাজ্য বিজেপি-তে বড় জায়গা দিয়েছে বিজেপি। এমন কি এমপি হয়েছেন অর্জুন সিং, মনিরুলের মত নেতাকেও গলায় উত্তরীয় পরানো হয়েছে। অর্থাৎ? এই অর্থাৎ হল সহজে কি বিজেপি ছাড়তে পারবেন মুকুল রায়? কারন একটা চিরকালীন ‘বিরোধী’ অভিযোগ হল রাজ্য মানে সিআইডি বা পুলিশ আর কেন্দ্র মানে ইডি, সিবিআই বা আইবি। ‘অর্থাৎ’ নারদ বা সারদা শীত ঘুম কাটিয়ে আবার জেগে উঠবে না কে বলতে পারে। কিন্তু যাকে নিয়ে কথা হচ্ছে তাঁর নাম মুকুল রায়। আমার ব্যাক্তিগত পর্যবেক্ষন বিজেপি ২১ নির্বাচনে থমকে যাবে ৭০-৮০ আসনে। ক্ষমতায় আসা নিশ্চিত তৃণমূলের। রাজ্য থেকে নির্মূল হয়ে যেতে পারে সিপিআইএম। ১-২ টি আসনে লড়াই দিলেও কংগ্রেসের অবস্থাও হবে তথৈবচ। বিজেপি কে শেষ করে নির্বাচনের পর নিজের ঘর তৃনমূলেই ফিরবেন চানক্য, মাত্র ১২ বছরের সীমিত সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা আর রাজনৈতিক পর্যবেক্ষন আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম। পাঠকদের অনুরোধ, আলোচনা বা সমালোচনা যা থাকুক অকপটে জানাবেন।

Related News

Health

এক চুমুকেই বাড়বে জেল্লা, জানুন কী সেই মিরাক্কেল ড্রিংক

এক চুমুকেই বাড়বে জেল্লা, জানুন কী সেই মিরাক্কেল ড্রিংক

সুন্দর ত্বকের অধিকারিণী হতে কেনা চায়। সকলেই চায় তাদের দাগহীন, চকচকে, ফর্সা ত্বক হোক। কিন্তু সুন্দর ত্বক পাওয়া অতটাই সহজ নয়।
ছাপ্পা-অশান্তি-রক্তারক্তিতে শেষ চতুর্থ দফা, কত শতাংশ ভোট পড়ল বাংলায়?

ছাপ্পা-অশান্তি-রক্তারক্তিতে শেষ চতুর্থ দফা, কত শতাংশ ভোট পড়ল বাংলায়?

উত্তরবঙ্গ থেকে ভোট যত দক্ষিণের দিকে আসছে, ততই যেন চেনা ছবি দেখা যাচ্ছে বাংলায়। চতুর্থ দফায় ছাপ্পা থেকে শুরু করে অশান্তি, রক্তারক্তিকাণ্ড কিছুই বাকি গেল না। বিশেষ করে বর্ধমান-দূর্গাপুর কেন্দ্রের তুল্ল্যা বাজার কার্যত রণক্ষেত্রের আকার ধারণ করল।
অভিযুক্ত অযোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করল সিবিআই

অভিযুক্ত অযোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করল সিবিআই

এসএসসি পরীক্ষা থেকে চাকরি পাওয়া পর্যন্ত ২০১৬ সালে শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত যাবতীয় নথি সংগ্রহের কাজ করেছে সিবিআই। প্রার্থীর পরীক্ষার রেজাল্ট, ইন্টারভিউ, শারীরিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার শংসাপত্র, চাকরির নিয়োগপত্র, বেতনের নথি সহ যাবতীয় তথ্য যাচাই করে দেখছেন তদন্তকারীরা।
প্লে অফ নিশ্চিত, গুজরাটের বিরুদ্ধে কেমন হতে পারে নাইটদের প্রথম একাদশ

প্লে অফ নিশ্চিত, গুজরাটের বিরুদ্ধে কেমন হতে পারে নাইটদের প্রথম একাদশ

কারণ রাজস্থান রয়‌্যালস, তারা দুনম্বরেই রয়ে গিয়েছে। কেকেআর যদি শেষ দুটো ম‌্যাচ জিততে পারে গ্রুপ শীর্ষে থেকেই শেষ করবেন শ্রেয়সরা।
অবশেষে গলল বরফ? তৃণমূলের তারকা প্রচারক হিসাবে প্রত্যাবর্তন ঘটালেন কুণাল!

অবশেষে গলল বরফ? তৃণমূলের তারকা প্রচারক হিসাবে প্রত্যাবর্তন ঘটালেন কুণাল!

কুণাল ঘোষ। দলের রাজ্য সম্পাদক পদের পাশাপাশি লোকসভা নির্বাচনের তারকা প্রচারক হিসাবেও তাঁকে বাদ দিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। তিনি নিজেও বলেন, আমি সিস্টেমে মিসফিট। কিন্তু, তৃণমূলের একনিষ্ঠ সৈনিক হিসাবেই তিনি থাকবেন তাও জানান।
'৪ জুনের আগে শেয়ার কিনে রাখুন', কেন এমন বললেন অমিত শা

‘৪ জুনের আগে শেয়ার কিনে রাখুন’, কেন এমন বললেন অমিত শা

ওইদিন ব্যাপক ভোটে জয়ী হবেন বলে আত্মবিশ্বাসী শাহ। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “শেয়ার বাজার আবারও উর্ধ্বমুখী হবে। কারণ স্থায়ী সরকার থাকলে স্টক মার্কেটে যথেষ্ট লাভ হয়”।

Lifestyle and More...