নজরবন্দি ব্যুরোঃ জিন্দা লাশের মতো বেঁচে আছেন, পা ভাল হলে দু’পায়ে হেঁটে জনগণকে প্রণাম জানাবেন মমতা। তবু মা বোনেদের সঙ্গে দেখা করার জন্য মনের জোর নিয়ে এসেছি, খড়গপুরের ভরা দুপুরে অগণিত মানুষের মাঝে এটাই ছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম কথা। প্রথম থেকেই মমতার প্রধান হাতিয়ার তাঁর নিজের ‘গার্লস টু দা নেক্সট ডোর ইমেজ।” বিজেপি দাঙ্গাকারী মাধাই, ভন্ডামির দোকানদারি, দুর্নিতির ফ্যাক্টরিঃ কেশিয়াড়ীতে মমতা। কিছুক্ষণ আগেই গড়বেতা থেকে মমতা বলেছিলেন এই নির্বাচন বাংলার, আমি আপনাদের পাহারাদার, দুর্ঘটনা হলেও টাকা দিই। শুধু বিজেপির নয়, এই মুহুর্তে রাজ্যের সকল দলই পাখির চোখ করেছে জঙ্গলমহলকে। নিজেদের ঘাঁটি শক্ত করতে ব্যাক টু ব্যাক সভা করছেন নেতা মন্ত্রীরা। এই পরিস্থিতিতে হুইলচেয়্যারে বসেই জঙ্গল মহলে সভা করছেন রাজ্যের আহত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গতকালই জঙ্গল মহলে সভা করেছেন তিনি। কাল বিকেলেই তৃণমূলের তরফ থেকে প্রকাশিত হয়েছে দলের নির্বাচনী ইস্তেহার। এর পর আজ ফের গড়বেতার পর কেশিয়াড়ীতে সভা করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুনঃ আমার একটা পা গেছে, এখানের মায়েদের দু’পায়ে প্রণামঃ কেশিয়াড়ীতে মমতা
পাখির চোখ বাংলার মসনদ। আর তারজন্যেই সবথেকে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে জঙ্গল্মহল। গত বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ১৫ টি আসনের মধ্যে জোড়া ফুল শিবির জিতেছিল ১৩ টি আসন। কিন্তু গল্প ঘুরে যায় লোকসভা নির্বাচনে গিয়ে, তৃণমূলের ঘাড়ের পাশ দিয়ে উঠে আসে বিজেপি। দলের সংগঠন ঠিক করার জন্য গত দু’বছর ধরে দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী সাংগঠনিক সময় দিয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুরে। রাজনৈতিক মহলের মতে একেবারে সাধারণ মানু্ষেরও ঘর অবধি পৌঁছে গেছে ইস্তাহারের সেই সুবিধা। এবার সেই পথ ধরেই নির্বাচনে তৃণমূলের জমি আরও শক্ত করতে বৃহস্পতিবার পশ্চিম মেদিনীপুরের তিন জায়গায় সভা রয়েছে মমতার। তার প্রথম সভা করছেন গড়বেতা থেকে।গড়বেতার সভার পর মুখ্যমন্ত্রী সভা করছেন কেশিয়াড়ীতে।
গড়বেতায় দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কথায় উঠে এসেছিল নন্দীগ্রামের মানুষের ওপর আবার মামলা এবং গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কথা। তিনি জানিয়েছেন বিজেপি একটা সর্বনাশা রাজনৈতিক দল। বাইরে থেকে বাস-ট্রেনে করে লোক এনে যদি ভয় দেখায় বিজেপি, রুখে দাঁড়াবেন। নন্দীগ্রামে কৃষি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করছে। ওঁদের বিরুদ্ধে যদি মামলা হয়, বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে কেন মামলা হবে না? বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের বারবার বাংলা আসার প্রসঙ্গেও তিনি বলেন, ভোট এলেই ক্যাশ নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। হাজার হাজার নেতা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বাইরে থেকে বিমানের পর বিমানে চেপে আসছেন। বিমানের পর বিমান ভোট লুটের চেষ্টা করছেন।আমপানের সময় কোথায় ছিল বিজেপি, কোথায় ছিলেন নরেন্দ্র মোদী, ভোটের সময় টাকা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। এলেই হাতা-খুন্তি নিয়ে তেড়ে যাবেন। ঘরের দুয়ারে সাপ লুকিয়ে থাকে, বাঘ লুকিয়ে থাকে, তাদের ঢুকতে দেওয়া যাবে না।
গড়বেতার পর কেশিয়াড়ীর সভায় মমতা শুরুতেই বলেন, “আমার একটা পা গেছে, এখানের মায়েদের দু’পায়ে প্রণাম।” রোদে এতদূর থেকে আসার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। ২০০ কোটি খরচ করে তৈরি সেতুতে ৯০ কিলোমিটার রাস্তা এখন ৪৫ কিলোমিটারে পরিণত হয়েছে, রাস্তাঘাটের উন্নয়নের কথা তুলে ধরেছেন। কটাক্ষ করেছেন স্থানীয় বিধায়ককে। ভন্ডামী ছাড়া যে তিনি কিছুই দিতে পারেননি একথাও বলেন তিনি। তিনি আরও বলেন বিজেপি পার্টি ভন্ডামির দোকানদারি, দুর্নিতির ফ্যাক্টরি।শুধু মিথ্যে কথা বলে।
তিনি আরও বলেন, মেদিনীপুরের কত ছেলেমেয়ে আটকে ছিল লকডাউনে। আমি মুম্বইয়ে টাকা পাঠিয়েছি। রাজস্থানে বাস পাঠিয়েছি। সকলকে নিয়ে এসেছি। আপনারা দেখেছেন বাচ্চাকে বাক্সে শুইয়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন মা। এদের কোনও মায়া-দয়া নেই। এরা স্বৈরাচারী, দুরাচারী, রাবণের দল। এরা শুধু গিলতে এসেছে। মুখে হরি হরি আর পিছনে চুরি করি, এই হল বিজেপি। প্রসঙ্গে বিজেপি সমর্থকদের কফিহাউস দখলের কথাও তুলে আনেন তিনি। “মান্না দে যে কফিহাউস নিয়ে গান গেয়েছেন, সেই কফিহাউসেও গুন্ডাগুলো বসে রয়েছে। কফিহাউসে যে ছেলেটির ছবি সামনে এসেছে, সে বহিরাগত গুন্ডা। কফি হাউস দখল করতে গিয়েছিল। ওরা জানে কফি হাউসে কারা যায়?”
তার সঙ্গে তিনি এও বলেন, বিজেপির একটা নতুন গেমপ্ল্যান আছে। নাম এনপিআর। যাকে আমরা এনআরসি বলি । আমি বাংলায় এনপিআর করতে দিইনি। কয়েকদিন আগেই বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসু জানিয়েছিলেন এবার তাঁদের লক্ষ্য পরিযায়ী শ্রমিকেরা। তাঁদের ভোট দেওয়ার জন্য বাংলায় আনবে বিজেপি। এবং নির্বাচন শেষ হওয়ার পরেও তাঁদের রাজ্যেই অপেক্ষা করতে বলেছেন বিজেপি নেতা। কারণ ক্ষমতায় এলে বাংলাতেই কর্মসংস্থান করবে বিজেপি, তাতে বাইরের রাজ্যে যেতে হবেনা তাঁদের আর। অন্যদিকে আজকের কেশিয়াড়ীর সভাতে মুখ্যমন্ত্রী জানান যাঁরা বাইরে কাজ করেন তাঁরা ভোটের দিন বাড়িতে ফিরে ভোট না দিলে তাদের নাম বাদ দিয়ে দেবে।
ভোটের দিন জনগণকে সতর্ক থাকার বার্তাও দিলেন তিনি। মেশিন খারাপ করে বাড়ি ফেরত পাঠিয়ে দিতে চাইবে। যাবেন না। মেশিন ঠিক হলেও ভাল করে দেখে ভোট দিতে হবে। গুন্ডারা যেন ভোট লুঠ করতে না পারে। ভোটের পর এক মাস মেশিন পাহারা দিতে হবে। ভোটটাকে সযত্নে নজরে রাখবেন। কিছু খাইয়ে ভোট লুঠ করতে পারে। ভোটবাক্স পাহারা দেওয়ার সময় কারও হাতে কিছু খাবেন না। বাইরের গুন্ডারা ভোট লুঠ করতে এলে হাতা-খুন্তি নিয়ে দৌড়ে যাবেন।