নজরবন্দি ব্যুরোঃ সর্বভারতীয় সভাপতি পদে ফের রাহুলই, প্রায় নিশ্চিত রাজনৈতিক মহল নেহেরু থেকে রাজীব গান্ধির পর এবার কি কংগ্রেসে আসতে চলেছে “রাহুল-প্রিয়াঙ্কা যুগ”? রাজনৈতিক মহল তথা কংগ্রেস দলের অন্দরমহল নিশ্চিত সভাপতি পদে ফের কামব্যাক করতে চলেছেন ইন্দিরা পৌত্র রাহুল গান্ধী।পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশে দলের তরফে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হতে চলেছেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বররা।
আরও পড়ুনঃজীবন যুদ্ধে জোর ফাইট দিচ্ছেন ‘ফেলুদা’, সুস্থ হচ্ছেন ধীরে ধীরে।
এই প্রথম রাহুলের পাশাপাশি দলে গুরুত্বপূর্ণ মুখ হিসেবে উঠে আসছেন প্রিয়াঙ্কাও।
গত লোকসভা নির্বাচনে দলের ভরাডুবির পর সভাপতি পদ ছেড়েছিলেন রাহুল। তারপর থেকে ক্রমে রাহুল-ঘনিষ্ঠ নেতারা কোণঠাসা হয়ে পড়েন। অনেকেই দল ছেড়েছেন। যাঁরা এখনও রয়ে গিয়েছেন, তাঁরা কার্যত ‘একঘরে’ হয়ে রয়েছেন। এবার সেই নেতাদের ধীরে ধীরে আবার সামনের সারিতে নিয়ে আসার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অন্যদিকে, উত্তরপ্রদেশে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর নেতৃত্বে নির্বাচন লড়া হবে বলে দল ঠিক করেছে। দলের সংগঠন ঢেলে সাজাচ্ছেন তিনি। প্রিয়াঙ্কা দলের সাধারণ সম্পাদকও। এক সাক্ষাত্কারে তিনি নিজেই জানিয়েছেন, দেশের সবচেয়ে বড় রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হতে পারেন তিনি।
গত ১২ সেপ্টেম্বর কংগ্রেসের নতুন ওয়ার্কিং কমিটি তৈরি করা হয়েছে। তাতে প্রিয়াঙ্কাকে পুরো উত্তরপ্রদেশের দায়িত্ব দিয়েছেন দলের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। রাজ্যে তিন দশকের বেশি সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে রয়েছে কংগ্রেস। ২০২২ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখে যোগী আদিত্যনাথ সরকারের বিরুদ্ধে বারবার সরব হচ্ছেন প্রিয়াঙ্কা। রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা, মহিলাদের ওপর অত্যাচার, দলিত নির্যাতন ইত্যাদি ইস্যুতে অন্যদের পেছনে ফেলে বিরোধিতায় সবার আগে রয়েছেন তিনি। তবে গত লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে প্রিয়াঙ্কা-ম্যাজিক কাজ করেনি। নির্বাচনের ঠিক আগে তাঁকে দলের সাধারণ সম্পাদক পদে বসিয়ে পূর্ব উত্তরপ্রদেশের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।
আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই দলে সাংগঠনিক নির্বাচনের তোড়জোড় চলছে। সম্ভবত জানুয়ারিতে নতুন সভাপতি এবং ওয়ার্কিং কমিটি নির্বাচিত হবে।
কংগ্রেস সূত্রের খবর, তার আগেই আবার নতুন করে ‘টিম রাহুল’ তৈরির তত্পরতা শুরু হয়েছে কংগ্রেসের অন্দরে। গত হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই নিয়ে মতবিরোধের জেরে দল ছেড়েছিলেন রাহুল-ঘনিষ্ঠ নেতা অশোক তানোয়ার। তিনি হরিয়ানা প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি পদে ছিলেন। সম্প্রতি রাহুল গান্ধীর এক উপদেষ্টা তাঁকে ফোন করে দলে ফেরার প্রস্তাব দিয়েছেন। একইভাবে বিহারে জনতা দল (ইউনাইটেড) থেকে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন রাহুল-ঘনিষ্ঠ নেতা মোহন প্রকাশ। প্রায় দেড় বছর নেপথ্যে ছিলেন। সম্প্রতি তাঁকে দলের নির্বাচন পরিচালনা ও সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক পদ দেওয়া হয়েছে।
দলে আরও কয়েকজনকে গুরুত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রাক্তন আইপিএস এবং আদতে কর্ণাটকের বাসিন্দা অজয় কুমার ২০১৪-য় কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার পর তাঁকে ঝাড়খণ্ড প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদে বসিয়েছিলেন রাহুল গান্ধী। ২০১৯-এ দলের পরাজয়ের পর ‘বহিরাগত’ তকমা নিয়ে দল ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি। সূত্রের খবর, এখন তাঁকে আবার দলে ফেরানোর চেষ্টা চলছে। প্রায় একই ছবি মুম্বইয়েও। প্রাক্তন শিবসৈনিক তথা রাহুল-ঘনিষ্ঠ নেতা হিসেবে পরিচিত সঞ্জয় নিরুপমকে দলের মুম্বই শাখার প্রধান করা হয়েছিল। পাঁচ বছর পরে ২০১৯-এ তাঁকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। গত সপ্তাহে তাঁকে বিহার নির্বাচনের প্রচার কমিটি ও সমন্বয় কমিটির সদস্য করা হয়েছে।
সর্বভারতীয় সভাপতি পদে ফের রাহুলই, প্রায় নিশ্চিত রাজনৈতিক মহল ।বরাবরের রাহুল-ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত নেতা মধুসূদন মিস্ত্রিকে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে। কার্যত তাঁর নেতৃত্বেই দলে ‘রাহুল-প্রিয়াঙ্কা যুগ’ শুরুর রোডম্যাপ তৈরি হচ্ছে। কংগ্রেস সূত্র জানাচ্ছে, সব কিছু ঠিকঠাক এগোলে আগামী জানুয়ারিতে আবারও দলের সভাপতি পদে বসবেন রাহুল গান্ধী। আগামি বছর বেশ কিছু রাজ্যে রয়েছে বিধানসভা ভোট। ক্ষমতা হারানো কংগ্রেস সেগুলিকে পাখির চোখ করে দেশের শাসনক্ষমতা ফিরে পেতে কোমর বেঁধে নামতে চলেছে তা বলাইবাহুল্য।