নজরবন্দি ব্যুরো: শারদীয়া দুর্গাপূজাকে ‘অকালবোধন’ বলা হয়। কালিকা পুরাণ ও বৃহদ্ধর্ম পুরাণ অনুসারে, রাম ও রাবণের যুদ্ধের সময় শরৎকালে দুর্গাকে পুজা করা হয়েছিল। হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে, শরৎকালে দেবতারা ঘুমিয়ে থাকেন। তাই এই সময়টি তাঁদের পুজা যথাযথ সময় নয়। অকালের পূজা বলে তাই এই পূজার নাম হয় ‘অকালবোধন’।
আরও পড়ুন: বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবের বাকি মাত্র ৩৮ দিন, জানুন এবারের পুজো নির্ঘণ্ট
প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, শ্রী রামচন্দ্র সীতাকে উদ্ধারের জন্য শরৎকালে দেবী দুর্গার পুজা করে অকালে তথা অসময়ে দেবীকে জাগ্রত করেছিলেন বলে এই পুজোকে অকালবোধন নামে পরিচিত। পৌরাণিক বর্ণনা অনুযায়ী সূর্যবংশীয় রাজা সুরথ বসন্তকালে চৈত্র মাসে শুক্লাপক্ষের অষ্টমী তিথিতে দুর্গাপুজোর প্রচলন করেন। বসন্তকালে দুর্গাপুজোর প্রচলন হয় বলে এই পুজোকে বসন্তী পুজো নামে পরিচিত। বসন্তকালে মর্তে দেবী দুর্গার প্রথম পুজো হয়েছিল বলে দেবী বাসন্তিকা নামেও পরিচিত।
অকালবোধন সম্পর্কে কৃত্তিবাসের রামায়নে উল্লেখ পাওয়া যায়— রাবণের বন্দিদশা থেকে সীতাকে উদ্ধার করতে রাম বানরসেনার সাহায্যে লঙ্কা আক্রমণ করেন। কিন্তু যুদ্ধের সময় রামকে প্রসন্ন করার জন্য রাবণ তাঁর প্রশংসা করে স্তোত্রপাঠ শুরু করেন। এর পরই দোটানায় পড়েন রাম। রাবণের এই বন্দনার ফলে রাম তাঁকে বধ করা থেকে বিরত হন। ফলে, দেব-দেবীও চিন্তিত হয়ে পড়েন। সে সময় রাবণের জিহ্বায় অধিষ্ঠিত হয়ে সরস্বতী রামের উদ্দেশ্য কটূক্তি করান। এর পরই রাম রাবণের বিরুদ্ধে অস্ত্র তোলেন ও রাবণকে দুভাগে ভাগ করে দেন। কিন্তু ব্রহ্মার আশীর্বাদে রাবণ পুনরায় জীবিত হয়ে ওঠেন এবং যুদ্ধে সাহায্য চেয়ে অম্বিকার বন্দনা করেন। এর পরই অম্বিকা রাবণের রথে অধিষ্ঠিত হন।
অচিরেই রাম বুঝতে পারেন, দেবীর উপস্থিতিতে রাবণকে পরাজিত করা অসম্ভব। এই ঘটনা প্রত্যক্ষ করার পর স্বর্গে চিন্তিত দেব-দেবীরা বিষ্ণুর দ্বারস্থ হন। তখন বিষ্ণুই চণ্ডী বা দুর্গা বন্দনার পরামর্শ দেন। তখন রাম চন্ডীর আরাধনা শুরু করেন। কিন্তু এতেও সন্তুষ্ট হন না দুর্গা। সে সময় বিভিষণ ১০৮টি নীলকমল সহযোগে দেবীবন্দনার পরামর্শ দেন রামকে। হনুমানের আনা ১০৮টি নীলকমল নিয়ে পুনরায় পুজো শুরু করেন রাম। কিন্তু পুজোর সময় ১০৭টি নীলকমল পেয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন তিনি। পুজো সম্পন্ন করতে ও দুর্গার আশীর্বাদ লাভের উদ্দেশে তীর-ধনুক দিয়ে নিজের এক চোখ উপড়ে দুর্গার চরণে অর্পণ করতে প্রস্তুত হন রাম।
দুর্গা পুজোকে ‘অকালবোধন’ বলা হয়, কেন তা জানেন?
তবে, শরৎকালে দুর্গাপুজোটা কৃত্তিবাসের মনগড়া নয়, শুধু রামের অকালবোধন ব্যাপারটা মনগড়া ছিল। কারণ, শরৎকালে দুর্গাপুজো কংসনারায়ণ প্রথম না করলেও তিনি যে দুর্গাপুজো করেছিলেন সেটা শরৎকালেই ছিল। কৃত্তিবাস শরতের ধারণাটা মনে হয় সেখান থেকেই পেয়েছিলেন।