গত বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যেই যখন মূল লড়াই চলছে সেইসময়ে একটি আসনে লড়েই সেটিকে নিজের ঝুলিতে ভরে নেয় আইএসএফ। রাজ্য বিধানসভার অন্যতম মুখ হয়ে ওঠেন ভাঙড়ের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি। ধীরে ধীরে বঙ্গ রাজনীতিতে তাঁর পরিচিতি বাড়তে থাকে। লোকসভা নির্বাচনে ডায়মন্ড হারবারে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Abhishek Banerjee) হারাবেন বলেও দাবি করেছিলেন। শেষপর্যন্ত দলের সিদ্ধান্তেই আর প্রার্থী হওয়া হল না। এরইমধ্যে প্রশ্ন উঠল, নওশাদ (Nawshad Siddiqui) কি তৃণমূল যোগ দেবেন? ২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনে (Assembly Election 2026) শাসক দলের হয়ে ময়দানে নামবেন তিনি? উত্তরে কী জানালেন আইএসএফ চেয়ারম্যান।
আরও পড়ুন: তাপপ্রবাহের জেরে এগিয়ে এল গরমের ছুটি, এপ্রিলেই বন্ধ হবে স্কুলের পঠন-পাঠন
সাগরদিঘি উপনির্বাচনে সকলকে চমকে দিয়ে জয়লাভ করেন কংগ্রেস প্রার্থী বায়রন বিশ্বাস। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী সাগরদিঘির ফলাফলকে মডেল হিসেবে তুলে ধরেছিলেন। সেইসময় বায়রনকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তিনি কি তৃণমূলে যোগ দেবেন? উত্তরে জানিয়েছিলেন, ‘‘আমায় তৃণমূল কিনতে পারবে না। আমি তৃণমূলকে কিনে নেব।’ অথচ ফল ঘোষণার তিন মাসের মাথায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দেন তিনি। এবার কি তবে নওশাদের পালা? সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ভাঙড়ের বিধায়ককে প্রশ্ন করা হয়, ‘২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে কি তিনি তৃণমূলে যোগ দেবেন?’ এনিয়ে নওশাদের জবাব, ‘তিনি রাজনীতি ছেড়ে দিয়ে অন্ধকার ঘরে নিজেকে বন্দী করে রাখবেন, তবে বিজেপি কিংবা তৃণমূলে যোগ দেবেন না।’
ওই সাক্ষাৎকারে ভাঙড়ের বিধায়ক স্পষ্ট জানান, তিনি এবং তাঁর দল আইএসএফ দর্শনগতভাবে বিজেপি বিরোধী। তবে বিজেপির বিরোধিতার জন্য তৃণমূলে কখনও যাবেন না। তাঁর প্রশ্ন, বিজেপির বিরোধিতা করার জন্য তৃণমূলের হাত কেন ধরতে হবে? এমনকি বিজেপি ও তৃণমূলকে একে অপরের পরিপূরক বলেও দাবি করেন। নওশাদের দাবি, ২০১১ সালে তৃণমূল যখন জিতল, তখন বিজেপিকে দেখাই যেত না। ওই দলটাকে বাংলায় ডেকে এনেছে তৃণমূলই।
জানা যায়, আইএসএফের রাজ্য কমিটি ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনকে (Assembly Election 2026) পাখির চোখ করেছে। ২৬-এর ভোটে নওশাদ সিদ্দিকিকে মুখ করেই লড়াইয়ে নামতে চায় দল। সেক্ষেত্রে নওশাদ যদি ডায়মন্ড হারবারে প্রার্থী হন তাহলে আইএসএফ ‘লক্ষ্যভ্রষ্ট’ হতে পারে। এই কারণেই আইএসএফ রাজ্য কমিটি তাঁকে অনুমোদন দিতে চায়নি বলেই খবর। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে মজনু লস্করকে প্রার্থী করেছে আইএসএফ।
দলের সিদ্ধান্তেই লোকসভায় প্রার্থী হতে পারেননি, ২৬-এর ভোটে তৃণমূলের হয়ে লড়বেন নওশাদ?
দলবদল বর্তমান রাজনীতিতে অত্যন্ত স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। মনোমালিন্য, বাক বিতণ্ডা, আশাভঙ্গ এমন নানা কারণেই দলবদল দেখা যায়। কংগ্রেসের টিকিটে জিতেও তিন মাসের মধ্যেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘উন্নয়ন’-এ যোগ দিয়েছিলেন বায়রন বিশ্বাস। গত মার্চ মাসে ব্রিগেডে জনগর্জন সভা থেকে ব্যারাকপুরে পার্থ ভৌমিককে টিকিট দেয় তৃণমূল, ক্ষোভ উগরে ঘাসফুল ছেড়ে পদ্ম ফুলে যোগ দেন অর্জুন সিং। ২০২১ সালে বিজেপির টিকিটে জিতে আসা বেশ কয়েকজন বিধায়ক তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তালিকায় আছেন, মুকুল রায়, কৃষ্ণ কল্যাণী, বিশ্বজিৎ দাস, মুকুটমণি অধিকারী। মুকুল রায় ছাড়া বাকি তিনজনই আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের হয়ে টিকিট পেয়েছেন।