অর্ক সানা, সম্পাদক(নজরবন্দি): বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, এই মুহুর্তে বাংলা তথা ভারতবর্ষের বুকে অন্যতম আলোচিত নাম। দুর্নীতি ইস্যুতে কাউকে রেয়াত না করে খুব দ্রুততার সাথে যে বিচার করা যায় তা দেখিয়ে দিয়েছেন এই মানুষটি। কিন্তু বেশিদিন বিচারপতি হিসেবে মেয়াদ বাকি নেই অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের। আমার এই লেখাকে দয়া করে রাজনৈতিক রঙ দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। অতি উৎসাহীরা ‘বিচারপতি-কে নিয়ে একথা লেখা উচিত নয়’ এই সব বোঝাতে আসবেন না। ভারতীয় বিচারব্যাবস্থা এবং সংবিধানের প্রতি পূর্ণ সম্মান এবং আস্থা রেখে একজন ভারতীয় নাগরিক হিসেবে এই লেখা লিখছি।
ভারতবর্ষের বিচার ব্যাবস্থার ইতিহাসে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের মত বিচারক খুব কমই এসেছেন। এমন একজন বিচারক যাকে দুর্নীতি ইস্যুর মামলা থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে এমন একটা খবর প্রচারিত হওয়ার পরে কার্যত ভেঙে পড়েছিল আমজনতা, লাখো শিক্ষিত ছাত্র-যুব। এমন একজন মানুষ যার এক-একটি মন্তব্য ভারতীয় বিচার ব্যাবস্থার প্রতি নিপীড়িত সাধারণ মানুষের বিশ্বাস ফিরিতে দিয়েছে। আপাত সাধারণ কিন্তু মেরুদণ্ডকে শক্ত করে সোজা রাখা এই মানুষটিকে ভয় পায় দুর্নীতিকারীরা।
সময়টা ২০২২ সালের এপ্রিল মাসের ১৩ তারিখ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বলে এজলাসে বসে জানিয়ে দিয়েছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য ছিল, “দুর্নীতি দেখলে আমি রুখে দাঁড়াবই। মাথায় বন্দুক ঠেকালেও আমি থামব না।” তাৎপর্যপূর্ণ বক্তব্য, “মাথায় বন্দুক ঠেকালেও দুর্নীতির বিরোধিতা করে যাব।” ৬ ডিসেম্বর ২০২২, মামলা চলছিল বেআইনি নিয়োগের। ২০১৬-র প্যানেল অনুযায়ী, ৪২ হাজার ৫০০ শিক্ষকের নিয়োগ হয়েছিল প্রাথমিকে। সেখানে বিস্তর অনিয়ম হয়েছিল। এজলাসে বসে পর্ষদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিচারপতি বলেন, “ঢাকি সমেত বিসর্জন কীভাবে দিতে হয়, আমিও জানি।”

৩ নভেম্বর ২০২২, নিয়োগ দুর্নীতি ইস্যুতে এজলাসে বসে বিচারপতি বলেন, “আসল অপরাধী কে বা কারা, তা সবাই জানে। আমার জীবদ্দশায় তারা ধরা পড়বে বলে মনে হয় না। আমি তো নিজে ধরতে যেতে পারব না। যা করার, পুলিশ, ইডি , সিবিআই-কে করতে হবে।” এরপর একটি মামলায় সিবিআই-কে ধমক দিয়ে বলেন, কি তকম তদন্ত করছেন? “আপনাদের থেকে তো ভাল জিজ্ঞাসাবাদ করতে আমি জানি।”
এত সিবিআই তদন্ত দিচ্ছেন কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন, “মুড়ি-মুড়কির মতো দুর্নীতি হয়েছে বলেই মুড়ি-মুড়কির মত সিবিআই দিতে হয়েছে।” সব থেকে তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেছেন তিনি গতকাল রাতেই। বলেছেন, যতদিন বিচারপতি আছি দুর্নীতি-র বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াব। অবসর নেওয়ার পরেও এই একই কাজ চালিয়ে যাব অন্য ভাবে। এখানেই আসছে প্রশ্ন এবং উত্তর…
হাতে ক্ষমতা না থাকলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়বেন কিভাবে? এমনিতেই চিটফাণ্ড দুর্নীতি কান্ডে হাইকোর্টে পাশপোর্ট জমা রেখে জামিনে থাকা এক তৃণমূল মুখপাত্র তাঁকে বিজেপি-সিপিআইএমের লোক বলে দাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। অর্থাৎ রাজনৈতিক রঙ লাগানোর চেষ্টা করেছেন। কোটি কোটি টাকা খরচ করে ভারতের প্রথম সারির আইনজীবীদের ভাড়া করে তাঁর হার থেকে মামলা সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে রাজ্যের শাসক দল। সব চেষ্টাই হয়েছে কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
এমন একজন মানুষ যিনি শুধু মুখে সততার কথা বলেননা, সরাসরি কাজে তা করে দেখান। এই ধরনের মানুষের হাতে যদি রাজ্য পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া যায় তাহলে সেই রাজ্যের সামগ্রিক উন্নয়ন করতে সাইকেল বা স্কুল ব্যাগ অথবা মাসে ৫০০ টাকা প্রদান করতে হবেনা। খেটে খেতে শিখে যাবে সাধারণ মানুষ। নিজের আত্মসম্মান আর মর্যাদাবোধ কি হয় বুঝতে শিখবে বঙ্গবাসী। এবং সেটাও খুব অল্প সময়েই।
অবসর নেওয়ার পর বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ফিরে আসুন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।
মমতা বন্দোপাধ্যায় টাটা কে রাজ্য থেকে তাড়ানোর পর, রতন টাটা বলেছিলেন, ভেবেছিলাম বন্দুক দেখিয়ে ভয় দেখাচ্ছেন, কিন্তু উনি তো ট্রিগার টেনে দিলেন। এই ঘটনার পর কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিজনেস সামিট হয়েছে কিন্তু কোন শিল্পপতি শিল্প করতে উদ্যোগ নেননি বাংলায়। অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের মত অ্যাডমিনিস্ট্রেটর পেলে ভাগ্য বদলে যাবে বাংলার। লাইন লেগে যাবে শিল্পপতিদের। নিয়ম করে স্বচ্ছভাবে চাকরির পরীক্ষা হবে। একথা বুঝতে সাধারণ পর্যবেক্ষন ক্ষমতাই যথেষ্ট।
সেই কারনেই একজন সাধারন সংবাদকর্মী এবং দেশের দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে আপামর বঙ্গবাসী এবং তৃণমূল ব্যাতীত রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আবেদন করছি। এই মানুষটির কাছে আবেদন করুন যদি তিনি মুখ্যমন্ত্রীর মুখ হিসেবে নির্বাচন লড়তে রাজি হয়ে যান! শুধু মাথায় রাখবেন এনাকে পার্টি লাইন দিয়ে বাঁধবেন না। কিছু মানুষ আছেন যারা বাঁধনহীন। কিন্তু এনাদের সংখ্যা নগন্য, সম্ভবত once in a million… অবসর নেওয়ার পর বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ফিরে আসুন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।