স্তিমিত মোদি ম্যাজিক। দিল্লি-বিহার বুঝিয়ে দিল '২১ নির্বাচনে কি ঘটবে রাজ্যে!
স্তিমিত মোদি ম্যাজিক। দিল্লি-বিহার বুঝিয়ে দিল '২১ নির্বাচনে কি ঘটবে রাজ্যে!

অর্ক সানা, সম্পাদক(নজরবন্দি): স্তিমিত মোদি ম্যাজিক। নির্বাচন পূর্ববর্তী জনমত সমীক্ষা ইঙ্গিত দিয়েছিল বিহারে পরাজিত হতে পারে এনডিএ তথা বিজেপি এবং জেডিইউএর জোট। কিন্তু পাত্তা দেয়নি গেরুয়া ব্রিগেড। দিল্লি বিধানসভা নির্বাচন থেকে শিক্ষা না নিয়ে বিজেপি নেতৃত্ব আশায় ছিলেন ১৯ সালের মোদি ঝড় কে কাজে লাগিয়ে ফের বিহারের ক্ষমতা দখল সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু লকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচন যে এক নয় তা ফের একবার প্রমান হতে চলেছে বিহারে।

আরও পড়ুনঃ জীবন যুদ্ধে হার না মানা আমেরিকার বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিহার জুড়ে অবস্থিত ৪০ টি লোকসভা আসনের মধ্যে ৩৩টি তে জয় পেয়েছিল এনডিএ জোট। যার মধ্যে ১৭টি বিজেপি এবং ১৬ টি নিতিশের জেডিইউ। অর্থাৎ বিধানসভা ভিত্তিক প্রায় ৭০ শতাংশ আসনে এগিয়ে ছিল জোট প্রার্থীরা। কিন্তু এক্সিট পোল যা ইঙ্গিত দিচ্ছে তা সত্যি হলে ম্যাজিক ফিগার তো অনেক দূরে ১০০ সংখ্যা পেরতে পারবে না বিজেপি-জেডিইউ জোট! বিজেপি ঘেঁষা সবকটি সংবাদমাধ্যমের বুথ ফেরত সমীক্ষা বলছে ব্যাপক ভাবে পরাজিত হতে চলে এনডিএ। ঠিক যেমনটা হয়েছিল দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে।

স্তিমিত মোদি ম্যাজিক। দিল্লিতে অবস্থিত ৭টি লোকসভা আসনের মধ্যে ৭টি তেই জিতেছিল বিজেপি। বিধানসভা ভিত্তিক ৬৫ টি আসনে এগিয়েছিল ৭০ টি আসনের মধ্যে। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনের মাত্র মাস ছয়েক পরে হওয়া বিধানসভা নির্বাচনে সেই একই জনতা ভোট দিল বিজেপি-র বিরুদ্ধে! ফল মাত্র ৮টি আসনে জয় পেল গেরুয়া ব্রিগেড।

এদিকে বিহার নির্বাচনের কয়মাস পরেই হতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচন। রাজ্যের বিয়াল্লিশ টি আসনের মধ্যে গত লোকসভা নির্বাচনে ১৮টি আসন পেয়ে টগবগ করে ফুটছে গেরুয়া ব্রিগেড। সমর্থকরা অপেক্ষমান আর তো মাত্র কয়েকমাস! তারপরেই বাংলার মসনদে বসছে বিজেপি। অনেকে আবার মনে মনে মন্ত্রীসভা গঠন করে ফেলেছেন! রাজ্যে এসে অমিত শাহ তো ২০০ আসন প্রাপ্তির ভবিষ্যতবাণী করেই ফেলেছেন। এখন থেকেই কে কোন আসনে দাঁড়াবেন তার জন্যে লোকাল নেতারা যোগাযোগ এবং তৈল মর্দন করতে শুরু করেছেন নিজের পরিচিত সার্কেলের নেতাদের।

কিন্তু জয় কি সহজে আসবে? অমিত শাহ যখন নিশ্চিত ২০০+ আসন নিয়ে সরকার গড়ছে বিজেপি তখন সোনার বাংলা গড়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের আবেদন কেন বিজেপি কে ভো দেওয়ার জন্যে। দিল্লি, বিহারের মত একই ফর্মূলা কাজ করছে এ রাজ্যেও। মোদি-তে শুরু আর মোদিতেই শেষ। অমিত শাহ বলছেন মোদিজী-র নেতৃত্বে সোনার বাংলা গড়বেন! কিন্তু তিনি তো প্রধানমন্ত্রী! তাহলে কি বঙ্গও বিজেপি-তে বিশ্বাসযোগ্য মুখের অভাব? প্রশ্ন উঠছে গেরুয়া শিবিরের মধ্যেই।

অন্যদিকে তৃণমূল কে হারানোর চক্করে তৃণমূলের প্রাক্তন নেতা কর্মীদের নেতৃত্ব বিজেপি-র আদি কর্মীদের মনোবল ভাঙছে প্রতিনিয়ত। বিজেপি কর্মীরা তৃণমূলের নেতা কর্মীদের প্রকাশ্যে আক্রমণ শানাতে পারছেন না। মনে ভয়, কাল যদি তিনি বিজেপি-র নেতা হয়ে বসেন! সারদা নারদের অভিযুক্তদের শাস্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন অমিত শাহ, এই বঙ্গে এসেই। কিন্তু কোথায় কি? শামুখের গতিতে চলছে তদন্ত। অন্যতম অভিযুক্ত, মুকুল রায় এখন সর্বভারতীয় সহ সভাপতি। তোয়ালে খ্যাত, শোভন চট্টোপাধ্যায় এখন রাজ্য কমিটির সদস্য। নেতা হয়েছেন শঙ্কু পাণ্ডার মত নারদ অভিযুক্ত-ও! আছেন আরও অনেকে…

সুতরাং দিল্লি এবং বিহার নির্বাচনের ট্রেন্ড যে বাংলাতেও বজায় থাকবে টা বলাই বাহুল্য। বাম ভোটের বড় অংশ বিজেপি-তে গিয়েছিল তৃণমূল কে হারানোর তাগিদে। তাঁরা এখন দেখছেন তাঁদের বর্তমান নেতা প্রাক্তন তৃনমূলিরাই। অনেকে থমকে গেছেন, অনেকে ফিরে আসছেন বামে। আর অঙ্কটা পরিষ্কার বাম ভোট শতাংশ যত বাড়বে তত আসন বাড়বে তৃণমূলের। বলা বাহুল্য কমবে বিজেপি-র। ভুললে চলবে না ২০১৯ সালের মোদি ঝড়ে আসন হারালেও ভোট শতাংশ বেড়েছিল তৃণমূলের। মাথায় রাখতে হবে লোকসভায় ব্র্যাণ্ড ছিলেন মোদি আর বিধানসভায় ব্র্যাণ্ড কিন্তু মমতা-ই!