নজরবন্দি ব্যুরোঃ প্রাথমিক শিক্ষক পদে ভাগ বসাচ্ছে উত্তরপ্রদেশ-বিহার-ঝাড়খণ্ড থেকে আসা বহিরাগতরা। বহিরাগতদের আটকাতে সিটেটের বিরুদ্ধে এবার পথে নামল বাংলা পক্ষ। কলকাতার রানুচ্ছায়া মঞ্চে বাংলা পক্ষর প্রতিবাদ সভায় যোগ দিয়েছিলেন দূর-দূরান্তের নানা জেলা থেকে টেট-পাশ মেধাবী বাঙালি ছাত্রছাত্রীরা। উপস্থিত ছিলেন দীর্ঘ সময় ধরে প্রাথমিক শিক্ষক পদে নিয়োগের দাবিতে আন্দোলনরত হবু শিক্ষকরা। ভিন রাজ্যের চাকরি প্রার্থীদের নিয়োগ বন্ধ হোক, এবার সরব বাংলা পক্ষ।
আরও পড়ুনঃ SSC-TET Scam: ১০ শতাংশ কমিশন তাঁর কাছে যেত, ইডিকে জানাল কুন্তল
বাংলাপক্ষের বক্তব্য, দীর্ঘ সময় ধরে প্রাথমিক শিক্ষক পদে নিয়োগের দাবিতে আন্দোলন জারি রেখেছেন হবু শিক্ষকরা। এমনকি দীর্ঘ আন্দোলনের পর এখন ইন্টারভিউয়ে অংশগ্রহণ করছে তাঁরা। সেখানে বাইরের রাজ্য থেকে হাজার হাজার শিক্ষক এনে রাজ্যের সরকারি স্কুলে নিয়োগ করা হচ্ছে। যা বাংলার শিক্ষক নিয়োগে আত্মঘাতী ব্যবস্থার প্রচলন।

তাঁদের বক্তব্য, কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এক নির্দেশ বাংলার লক্ষ লক্ষ টেট-পাশ চাকরিপ্রার্থীদের স্বপ্ন ধ্বংসের মুখে। সিটেট নামক কেন্দ্রীয় পরীক্ষা, যা শুধু সেইসব রাজ্যে প্রযোজ্য, যেখানে রাজ্য টেট হয়না, সেই সিটেট পাশ করা ভারত জুড়ে লক্ষ লক্ষ বাইরের রাজ্যের মানুষকে বাংলার প্রাথমিক শিক্ষক পদে নিয়োগের ইন্টারভিউতে বসার অনুমতি দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এর ফলে সল্টলেকে প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের অফিসে ইউপি-বিহার-ঝাড়খন্ড থেকে আসা লোকেরা প্রতি ঘন্টায় ৪০০র অধিক আবেদনপত্র জমা দিচ্ছে। বাংলার ভূমিপুত্রদের বঞ্চিত করে সিটেট পাশ বহিরাগতদের বাংলার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি দখল করতে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেন আইনজীবী ফিরদৌস শামীম, যিনি আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য্যের জুনিয়র।
তাঁদের কথায়, বাংলার টেট পাশ আন্দোলনরত মেধাবী ছেলেমেয়েরা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য্যের কাছে সি-টেট আটকানোর জন্য কেস লড়তে অনুরোধ করলে বিকাশবাবু বাংলার ছেলেমেয়েদের পক্ষে এবং উত্তরপ্রদেশ এবং বিহারের দ্বারা বাংলার চাকরি দখলের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে অস্বীকার করেন। পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা সংসদও বিনা বাক্যে মহামান্য বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এই বাংলা ও বাঙালির জন্য চরম ক্ষতিকারক নির্দেশ বিনাবাক্যে মেনে নেয় ও এই কালো নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে যায়না। এখন টেটের বঞ্চিত ছেলেমেয়েদের পাশে সিপিএম, তৃণমূল, বিজেপি, কংগ্রেস কেউ নেই। আছে শুধু ভারতে বাঙালির অধিকার আদায়ের জাতীয় সংগঠন বাংলা পক্ষ।
এদিনের সভা থেকে বাংলা পক্ষর সাধারণ সম্পাদক গর্গ চট্টোপাধ্যায় বলেন, সিটেটের অনুমতি দিলে বাংলার প্রাথমিক শিক্ষক পদ ইউপি-বিহার-ঝাড়খন্ড থেকে আসা লোকে ভরে যাবে। পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য সরকারি স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি পেতে হলে এমনিতেই পশ্চিমবঙ্গের ডোমিসাইল হতে হয়না বা বাংলা ভাষার কোন লিখিত পেপারের পরীক্ষা বাধ্যতামূলক না। এর ওপর সিটেটদের ঢুকতে দেওয়া মানে টেট-পাশ করা বাঙালি ছেলেমেয়েদের প্রাথমিক শিক্ষক হবার স্বপ্ন শেষ করে দেওয়া এবং বাংলার শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা বহিরাগতদের হাতে তুলে দেওয়া। পশ্চিমবঙ্গে প্রাথমিকে সিটেট ঢোকানোর সঙ্গে জড়িত সবাই বাংলা ও বাঙালির সঙ্গে শত্রুতা করছে। বাংলা পক্ষ মেনে নেবেনা। সব দল চুপ। বাংলা পক্ষ লড়বে। বাঙালি জাতি বাংলা পক্ষর পাশে আছে।
ভিন রাজ্যের চাকরি প্রার্থীদের নিয়োগ বন্ধ হোক, সরব হল বাংলা পক্ষ

সাংগঠনিক সম্পাদক কৌশিক মাইতি বলেন, আজ আমাদের আন্দোলন শুরু হল। বাঙালি চাকরি প্রার্থীরা আমাদের সাথে আছে। বাঙালি সাথে আছে। অবিলম্বে সিটেট সংক্রান্ত নিয়ম প্রত্যাহার না করলে বড় আন্দোলন হবে। আমাদের রাজ্যের টেট দিয়েই প্রাইমারিতে শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে। সিটেট আমরা মানবো না, কোনো চাকরিপ্রার্থী মানবে না। বিহার-ইউপির একজনকেও চাকরি দেওয়া চলবে না৷ বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলির বাংলা ও বাঙালি বিরোধী এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে বা সুপ্রীন কোর্টে যাক রাজ্য। নাহলে বিরাট আন্দোলন হবে।