অর্ক সানা, সম্পাদক (নজরবন্দি): মাত্র ১০ বছর আগে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে সিপিআইএম তথা বামফ্রন্ট। ঠিম তাঁর আগেই বিধানসভা নির্বাচন ২০০৬ সালে ২৩৫ টি আসন জিতে শেষ বারের জন্যে ক্ষমতায় ফিরেছিল বামেরা। টানা ৭ বার। ৩৪ বছরের জমানা। সেই ৩৪ বছরের জমানা শূন্যতে পৌঁছে গেছে ২০২১ সালে। যার ধারাবাহিকতা বজায় থাকল আজ ফলাফল বের হওয়া ৩টি উপনির্বাচনেও। আজ দিনভোর NOTA-র সাথে লড়ল বামফ্রন্ট। শেষে জয়ীও হল।
আরও পড়ুনঃ ভবানীপুরে আটে আট মমতার, দেখুন কোন ওয়ার্ড কত লিড দিল মুখ্যমন্ত্রীকে।
ছোটবেলার কথা মনে পড়ছে। আজন্ম মনে হত লাল – লাল – আর – লাল, শুধুই লাল ঝান্ডা। কলেজের সেকেণ্ড ইয়ার, ২০০৬ সালের নির্বাচনে যখন বুদ্ধবাবু রেকর্ড আসন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হলেন, তখন মনে হত আরও ২৫ বছর। জন্মেছি লাল ঝান্ডার আমলে মৃত্যুও হবে লাল ঝান্ডার আমলেই। অসাধারণ লাগত মানুষটাকে। এখনও ওনার বইগুলো পড়লে মনে হয় এমন উচ্চ-মানের সাহিত্যিক… রাজনীতিতে যদি না আসতেন অনেক লেখা পেতে পারতাম। এদিকে সময় গড়াল, তারপর ধিরে ধিরে কেমন সব বদলে গেল। এখন বিধানসভায় বলার কেউ নেই আমি ‘বাম’!
২০০৬ সালের ২৩৫, ২০১১ তে নেমে এল মাত্র ৬২ আসনে! জ্ঞান হওয়ার পর প্রথমবার বামফ্রন্ট কে দেখলাম বিরোধী আসনে বসতে। বাবা বলত, বামেদের বিরোধীতা আরও ভয়ঙ্কর। কিন্তু সেই ভয়ঙ্কর রূপ সূর্যবাবুর ৫ বছরে একবারও দেখিনি। বিরোধী বামের ইতিহাস বলতে সেই জ্যোতি বসু। জ্যোতি বসুকে পড়ে জানা, আর সূর্য মিশ্রকে চোখে দেখে। তুলনা করতে চাইনা। বামেদের চরম বিরোধীতার ফসল মিলল ২০১৬ সালের নির্বাচনে। কংগ্রেসের সাথে জোট করে ৬২ আসন নেমে এল ৩২ এ! আর ২০২১ ‘০০’। কেন এমন হল? সবার থেকে ভাল জানের আলিমুদ্দিনের ভোট ম্যানেজাররাই।
ব্যাক্তিগত পর্যবেক্ষনঃ সিপিআইএম ওয়েস্ট বেঙ্গল নামে ট্যুইটারে CPIM এর একটি অফিশিয়াল অ্যাকাউন্ট আছে। রাজ্যে ৭ বারের বিজয়ী, ৩৪ বছর ক্ষমতায় থাকা পার্টির অফিশিয়াল পেজ থেকে ৬৪০ জন কে ফলো করা হয়। যদি খুঁটিয়ে দেখা যায়, কেউ বা কারা নিজের ইয়ার দোস্তদের ফলো করে রেখেছেন পার্টির অফিশিয়াল অ্যাকাউন্ট থেকে! অন্তত ১০০ টি এমন অ্যাকাউন্ট আছে এমন। বিরাট পতনের ছোট্ট কারন এটাও। সূর্যকান্ত মিশ্রের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ, কখনও ফলো করে দেখবেন। কে বা কারা পোস্ট করে জানিনা, কিন্তু রাজ্য সম্পাদকের পেজ রাজ্য সম্পদকেরই চালানো উচিত। নাহলে মাঝেমধ্যেই কেউ বা কারা নিজেদের পোস্ট শেয়ার করে দেন এই পেজ থেকে!! বড় পতনের এটাও ছোট্ট কারন। বাকি কারন ব্যাখ্যা করার জন্যে, রাজ্য কমিটি, কেন্দ্রীয় কমিটি, পলিটব্যুরো আছে সাথে আছে প্লেনাম!
দিনভোর NOTA-র সাথে লড়ল বামফ্রন্ট

যাই হোক ফিরি আজকের প্রসঙ্গে, দিনভোর NOTA-র সাথে লড়ল বামফ্রন্ট। সামসেরগঞ্জে সিপিএম পেয়েছে ৩.২৭ শতাংশ ভোট আর জঙ্গিপুরে আরএসপি প্রার্থী পেয়েছেন ৪.৫৪ শতাংশ। ভবানীপুরে ৩.৬ শতাংশ। কোথাও বাঁচেনি জামানত। তবে দিনভোর লড়াই হয়েছে নোটার সাথে। শেষ পর্যন্ত জয়ী হয়েছেন কমরেডরাই। জামানত না বাঁচলেও তৃতীয় স্থান পেয়েছেন তাঁরা। ভবানীপুরে প্রথম রাউন্ডের শেষে যখন দেখলাম শ্রীজীব ৮৫ আর নোটা ২৭ তখনই বোজা গিয়েছিল ট্রেইন্ড। দ্বিতীয় রাউন্ডে ফারাক কমে হয় ৪৭-৪২। ২১ রাউন্ডের শেষে ভবানীপুরের বাম প্রার্থী পান ৪ হাজার ২২৬ আর নোটা পায় ১,৪৪৩! জয়ী হয় সিপিআইএম। কটাক্ষ করছি… গালমন্দ করতেই পারেন, কিন্তু আজ কেন নোতার সাথে লড়তে হচ্ছে ভাবার দিন এসেছে। এবার ভাবুন কমরেড। নাহলে কিছুদিন পরে নোটার কাছেও পরাজিত হবেন।