Bangla Pokkho: ঘুষ দিয়ে চাকরির নেশা ছেড়ে ব্যবসা করুক বাঙালি
বাংলা পক্ষের যুক্তি চাকরি নয়, ব্যবসাই আসল পথ
||কৌশিক মাইতি, সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলা পক্ষ||
দুর্গাপুজো সবে শেষ হয়েছে। দুর্গাপুজো UNESCO থেকে Intangible Heritage এর তকমা পেয়েছে। এ জিনিস বাঙালির জন্য অত্যন্ত গর্বের। এবার দুর্গাপুজোয় প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে। ব্যবসার পরিমাণ বিপুল। এই বিপুল অর্থ কি বাঙালির পকেটে গেছে? নাকি, এই টাকার বড় অংশ গুজরাট, বিহার, ইউপি ও রাজস্থান বেরিয়ে গেছে? বাংলায় যেটুকু আছে তার কত শতাংশ বাঙালির পকেটে গেছে? এই তথ্য পরিষ্কার করে পাওয়া সম্ভব না৷ প্রায় ৩ লাখ মানুষের সাময়িক কর্ম সংস্থান হয়েছে এই উৎসবে, তার মধ্যে শহরগুলোতে কত শতাংশ বাঙালি কাজ করেছে? এর কোনো স্পষ্ট তথ্য নেই, আমরা আন্দাজ করতে পারি কেবল। আমরা যদি সচেতন হই, আগামীতে এই বিপুল পরিমাণ অর্থের বড় অংশ বাঙালির পকেটে ঢোকাতে পারি। খাবার দোকান থেকে, পোশাক, নানান সামগ্রী, পুজো প্যান্ডেলের যাবতীয় জিনিস, পুজোর উপকরণ, ইলেকট্রিক সরঞ্জাম সমস্ত কিছু বাঙালির থেকে নিলে এই বিপুল অর্থ এই বাংলায় থাকবে এবং বাংলাতেই খরচ হবে, তা বাঙালির পকেটেই ঢুকবে। বাঙালি যুব সমাজকে ব্যবসা করতেই হবে। তাই ঘুষ দিয়ে চাকরির নেশা ছেড়ে ব্যবসা করুক বাঙালি।

আরও পড়ুনঃ PFI: পিএফআইয়ের র‍্যাডারে নরেন্দ্র মোদি, অয্যোধা ও মথুরাতেও বোমা মারার হুমকি

বাঙালি ঝুঁকি নেয় না, বাঙালি ব্যবসা করে না। বাঙালি চাকরি ভালোবাসে। এগুলো প্রচলিত মিথ, অনেকাংশে সত্যিও। বাঙালি ছেলেমেয়েদের অধিকাংশেরই স্বপ্ন চাকরি করা, বাবা-মা ছোটো থেকে সেভাবেই বড় করে। গ্রাম-বাংলা ও মফঃস্বলের ছেলেমেয়েদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই প্রাইমারী ও হাইস্কুলে চাকরির স্বপ্ন দেখে। গত কয়েকবছর SSC এবং টেটে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে ও নিয়োগ হয়নি। ফলে একটা বড় অংশ হতাশার অতল গহ্বরে তলিয়ে গেছে। কারণ সরকারি চাকরির বাইরে ভাবতেই পারে না বড় অংশ। বাংলা পক্ষ স্বচ্ছ, দুর্নীতিমুক্ত এবং নিয়মিত শিক্ষক নিয়োগ চায়। তাই দুর্নীতিতে যুক্ত সকলের শাস্তি চায় বাংলা পক্ষ। কিন্তু বহু অভিভাবককে দেখেছি, যারা টাকার থলি নিয়ে এমএলএ, রাজনৈতিক নেতা ও দালালদের পায়ে পড়ে থাকে নিজের ছেলেমেয়ের চাকরি কেনার জন্য। কারণ ৬০ বছর পর্যন্ত নিশ্চিন্ত, বাড়িতে থেকে চাকরি এবং অনেকাংশে ঘুষের টাকা ছেলের বরপণ থেকে চলে আসবে, মেয়ে হলে পণ লাগবে না। এটাই ইনভেস্টমেন্ট ভাবে। সাথে আছে চাকরি করলে বিরাট সম্মান। বাঙালি ব্যবসাকে সম্মান দেয় না সেভাবে। আর মেধাবী ছেলেমেয়েরা ডাক্তার ও ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়, বা WBCS ও কিছু পদের আমলার দিকে যায়। লাখ লাখ ঘুষ দিয়ে সিভিক ভলেন্টিয়ার বা স্কুলে চতুর্থ শ্রেণীর চাকরি কিনবে বাঙালি, কিন্তু ব্যবসা করবে না। প্রাইমারিতে চাকরির জন্য বাবা-মা ৮-১০ লাখ দিতে রাজি, ওই টাকায় ছেলেমেয়েকে ব্যবসা খুলে দেবে না। প্রায় সবার মা-বাবা ছেলের মেয়ের জীবন নিশ্চয়তা চায়, ঝুঁকি চায় না।

ঘুষ দিয়ে চাকরির নেশা ছেড়ে ব্যবসায় নামুক বাঙালি 

রাজ্য সরকারি চাকরিই বাঙালির মূল সরকারি চাকরি। কারণ হিন্দি সাম্রাজ্যবাদের কারণে বাঙালি কেন্দ্র সরকারি চাকরি খুবই কম পায়, বাঙালিকে বঞ্চিত করা হয় পরিকল্পনামাফিক। যদি প্রতি বছর খুব স্বচ্ছ ভাবে শূন্য পদে নিয়োগ হয়ও, তা মোট কত হাজার হবে? সরকারি চাকরি মোট কর্ম সংস্থানের ১-২% মাত্র। প্রতি বছর প্রায় ১৫  লাখের বেশি ছেলেমেয়ে ১৮ বছর বয়স পূর্ণ করে। খুব ভালোভাবে নিয়োগ হলেও সব চাকরি মিলিয়ে ৫০-৬০ হাজারের বেশি চাকরি হবে? তাহলে বাকি ৯৮% শতাংশ কি করবে? গৃহশিক্ষক, কৃষি কাজ, মজুর, অটোচালক, রিক্সাচালক, ট্যাক্সিচালক মানে পরিবহন কর্মী, হকার, ছোটো ব্যবসায়ী, বড় ব্যবসায়ী, বেসরকারি কাজ, বেসরকারি চাকরি, বড় কোম্পানীতে বড় মাইনের চাকরি- এই নিয়েই মোটামুটি এই ৯৮%. বেসরকারি চাকরি ও কাজের বড় অংশই চলে যাচ্ছে বিহার-ইউপি-ঝাড়খন্ডের লোকজনের হাতে। কলকাতা, আসানসোল, দুর্গাপুর, শিলিগুড়ি, খড়্গপুর, হাওড়া, ব্যারাকপুর সহ বাংলার শহরাঞ্চলের বেশিরভাগ হকারই বহিরাগত, টাকার বিনিময়ে ভূমিপুত্রদের বঞ্চিত করে কাউন্সিলার, দালাল, মাফিয়ারা ফুটপাত ও ছোটো ব্যবসা তুলে দিচ্ছে বহিরাগতদের হাতে। বড় ব্যবসা, ফ্যাক্টরির মালিকানা আগেই মাড়োয়াড়িদের দখলে চলে গেছে। তাহলে বাঙালি কোথায় যাবে? বাঙালি বাধ্য হয়ে কেরালা, তামিলনাড়ু, মুম্বাই, হায়দ্রাবাদ, ব্যাঙ্গালোর, দিল্লি যাচ্ছে কর্মসংস্থানের জন্য। সকলেই ভাবছে বাংলায় কাজ নেই, ব্যবসা নেই। কিন্তু বাঙালি পাচ্ছেনা বলে বাঙালি জনমানসে এই ধারণা তৈরি হচ্ছে। বিহার-ইউপিতে কর্মসংস্থান না থাকায়, ওরা বাংলায় হু হু করে এসে মজুরি কমিয়ে দিচ্ছে।
ঘুষ দিয়ে চাকরির নেশা ছেড়ে ব্যবসায় নামুক বাঙালি 
ঘুষ দিয়ে চাকরির নেশা ছেড়ে ব্যবসায় নামুক বাঙালি 
বাংলায় একটা অংশ ৮-১০ হাজার মাইনের বেসরকারি চাকরি করছে মাড়োয়াড়ি ফার্মে। বহিরাগতদের কোম্পানীতে কাজ করতে লোকাল ট্রেনে বাদুড়ঝোলা হয়ে এসে বাঙালি হিসাবে গালাগাল খেয়ে সারাদিন কাজ করবে ৮-১০ হাজার মাইনেতে। তারাই আবার ফুটপাতে ব্যবসা করা, যারা অনেকে মাসে ৩০ হাজারের বেশি আয় করে তাদের খিল্লি করে। এ কথা লজ্জার। তবুও এরা ব্যবসামুখী হবে না। ছোটো ব্যবসাকে বাঙালিদের অধিকাংশই নীচু চোখে দেখে, ঠিক সামাজিক সম্মান নেই। এটাই হল মূল সমস্যা।

ঘুষ দিয়ে চাকরির নেশা ছেড়ে ব্যবসায় নামুক বাঙালি 

ঘুষ দিয়ে চাকরির নেশা ছেড়ে ব্যবসায় নামুক বাঙালি 
ঘুষ দিয়ে চাকরির নেশা ছেড়ে ব্যবসায় নামুক বাঙালি 
ব্যবসা করতে পরিশ্রম করতে হয়, ঝুঁকি নিতে হয়। ব্রিটিশের সময় থেকে চাকরবৃত্তি বাঙালির মজ্জায় ঢুকে গেছে। আর বামপন্থীরা বাঙালির উচ্চাকাঙ্খা কে খুন করেছে। গরীব থাকলেও কত ভালো আছে- এই ধরণের কথা চালু করেছে। প্রচুর টাকা ইনকাম যেন বাঙালির কাছে পাপ- এই ধারণা বামপন্থীদের তৈরি করা৷ বাঙালিকে বাঁচতে গেলে পুঁজি তৈরি করতে হবে, পুঁজিপতি হতে হবে। বাঙালিকে কর্মসংস্থান দিতে হবে ব্যবসায়ী হয়ে। ব্যবসা করার জন্য সকলের কাছে পুঁজি নেই- একথা সত্য। ব্যবসা করতে পুঁজি লাগে। পুঁজির লড়াইয়ে বাঙালি মাড়োয়াড়ির কাছে হেরে যায়। কিন্তু যেমন পুঁজি তেমন ব্যবসাও আছে। ছোটো করে হলেও বাঙালিকে ব্যবসা শুরু করতে হবে। ঘুষ দিয়ে চাকরির নেশা ছেড়ে বাঙালিকে ব্যবসায়ী হতে হবে। ৮-১০ হাজারের চাকরি করে টাই পরে ছোটো ব্যবসায়ীদের খিল্লি না করে নিজে ব্যবসায়ী হও, ভবিষ্যতে অনেক ভালো থাকবে।
ব্যবসাই বাঙালির মুক্তির একমাত্র পথ।