অর্ক সানা, সম্পাদক(নজরবন্দি): ঘুষ দিয়ে চাকরি পাওয়া অপরাধ, শুরুটা হয়েছিল শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারীকে দিয়ে। মন্ত্রী প্রভাব খাটিয়ে মেয়েকে চাকরি পাইয়ে দিয়েছিলেন শিক্ষকতার। মেধাতালিকায় ব্যাপক কারচুপি করে সেই কাজ করে দিয়েছিল স্কুল সার্ভিস কমিশন। এখন পরেশের মেয়ের চাকরি চলে গেছে। হাইকোর্টের নির্দেশে বেতনে প্রাপ্ত অর্থের এক কিস্তি টাকা ফেরতও দিয়ে দিয়েছেন তিনি। পরেশের মেয়ের পর প্রাথমিকে ২৬৯ জনের চাকরি বাতিল করেছে হাইকোর্ট।
আরও পড়ুনঃ একই পরিবারে ১৩ জনের চাকরি, পরেশের জুতোয় পা গলিয়েছিলেন পার্থও!
শুরু হয়েছে হাইকোর্টের নজরদারিতে সিট গঠন করে সিবিআই তদন্ত। শোনা যাচ্ছে প্রাথমিকে চাকরি হারানোর তালিকা আরও লম্বা হতে চলেছে। বেলাইনে ঘুষ দিয়ে নিয়োগ পেয়ে চাকরি হারাতে চলেছেন কমপক্ষে ১৭ হাজার ‘শিক্ষক’। বাড়ির লোকজন, আত্মীয়দের চাকরি পাইয়ে দিয়ে একসময় খবরের শিরোনামে এসেছিলেন শাসক দলের প্রাক্তন বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুন্ডু(বিধানসভা নির্বাচনের আগে যোগ দেন বিজেপিতে)। কিন্তু পরেশ আর পার্থ বাবুর যা তথ্য দিনদিন সামনে আসছে তাতে লজ্জা পাবেন বিশ্বজিৎও।
পরেশ চন্দ্র অধিকারী বাম আমলে রাজ্যের খাদ্য ও সরবরাহ দফতরের মন্ত্রী ছিলেন। ওই সময় থেকে শুরু করে তার আগে ও পরে পরেশের আত্মীয়েরা চাকরি পেয়েছেন কার্যত মুড়ি মুড়কির মত। শিক্ষার পাশাপশি খাদ্য দফতরও রয়েছে চাকরি প্রাপকদের তালিকায়। এক বা দুই নয় পরেশ অধিকারীর মোট ৩১ জন আত্মীয় চাকরি পেয়েছেন বিভিন্ন সরকারি দফতরে। অন্যদিকে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জির সিকিউরিটি ছিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের চন্ডীপুরের বাসিন্দা কলকাতা পুলিশে কর্মরত বিশ্বস্তর মণ্ডল। তাঁর ভাই এবং আত্মীয় সহ আরও ১০ জন প্রাথমিক শিক্ষক, হাই স্কুলের গ্রুপ ডি পদে চাকরি পেয়েছেন পার্থ চ্যাটার্জি শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালীন।
দুই মন্ত্রীকেই ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই। কিন্তু দুজনেই বীরদর্পে বেরিয়ে এসেছেন সিবিআইয়ের ডেরা থেকে। একজনকে তো আবার ফুল মালা পরিয়ে বীরের মত বরণ করে নিয়েছেন তাঁর অনুগামীরা। এদিকে সিবিআই অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে। একদিন স্কুল সার্ভিস অফিসে তল্লাশি তো অন্যদিন মধ্যশিক্ষা পর্ষদে। এই দুই অফিসে বসা সরকারি কর্মীদের চলছে পুছতাছ, কিন্তু পুছ ধরে টান দেওয়া হচ্ছেনা কারও।
ঘুষ দিয়ে চাকরি পাওয়া অপরাধ, কিন্তু ঘুষ খেয়ে চাকরি দেওয়া? চোর গুলোর শাস্তি হবেনা?

যারা ঘুষ দিয়েছিলেন ছোট, বড়, মেজ বা সেজ নেতাদের তাঁদের ঘুম উড়েছে একাধিক জনের চাকরি চলে যাওয়ায়। সংখ্যাটা যে ২৬৯ বা ৩০০ তে সীমাবদ্ধ নন তা জানেন সবাই। নিজের পাড়ার দিকে তাকান ১-২ জন মিলবেই। ওই সবে মিলে করি কাজের মতই বিষয়। অনুমানিক ৫০ হাজার শিক্ষক এই মুহুর্তে শিক্ষকতা করছেন যারা ঘুষ দিয়ে চাকরি পেয়েছেন, বেলাইনে। হিমশৈলের চূড়া যখন দেখা গেছে তখন পর্বত যে আছেই তা বললে বড় গোয়েন্দা হতে হয়না। শুধু প্রশ্ন হল, ধরুন আপনি ঘুষ দিয়ে চাকরি পেয়েছেন। আপনার চাকরি চলে যাবে, সরকারের টাকা ফেরত দিতে হবে সরকারকে। কিন্তু যারা ঘুষ নিয়ে বেমালুম হজম করলেন চাকরি দিয়ে তাঁদের কি হবে? মোদ্দা কথা হল, কিছু হবে আদৌ?