নজরবন্দি ব্যুরোঃ তৈরি নিম্নচাপ, ‘ইয়াস’ তৈরি হতে পারে কাল, ঝড়ের মোকাবিলার প্রস্তুতি তুঙ্গে রাজ্যে।আশঙ্কা ধীরে ধীরে বাস্তবের রূপ নিচ্ছে। শনিবার পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে তৈরি নিম্নচাপ আরও শক্তি বৃদ্ধি করে আজ রবিবার সুনির্দিষ্ট নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় তা আরও শক্তি বাড়িয়ে প্রথমে গভীর নিম্নচাপ ও তার পর ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে বলেই পূর্বাভাস। সেই ঘূর্ণিঝড় পরিনত হলে তা রূপ নেবে সুপার সাইক্লোনের। যার নামই হল ‘ইয়াস’। আলিপুর আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর, এই মুহূর্তে বঙ্গোপসাগরে নিজের শক্তি বৃদ্ধি করছে নিম্নচাপ।
আরও পড়ুনঃ সংক্রমণ অনেক কমলেও ঝুঁকি না নিয়ে এক সপ্তাহ লকডাউন বাড়ানো হল দিল্লীতে।
রবিবার রাতেই তা গভীর নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার কথা। সোমবার গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে ঘূর্ণিঝড়ে। সোমবার সন্ধ্যা থেকেই পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা উপকূলে ঘণ্টায় ৪০-৫০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে বলেই জানিয়েছে হাওয়া অফিস। তারপর মঙ্গলবার উত্তর, উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হওয়ার কথা ‘ইয়াস’-এর। সেদিন প্রথমে উপকূলীয় জেলাগুলিতে শুরু হবে বৃষ্টি। সন্ধ্যার পর বাকি জেলাতেও বৃষ্টি হবে বলে জানিয়েছে আলিুপর আবহাওয়া দপ্তর। যদিও ল্যান্ডফল কোথায় হবে তা এখনও পরিষ্কার নয়। ইয়াসের গতিপ্রকৃতি বুঝতে আরও অপেক্ষা করতে হবে বলেই জানাচ্ছে আবহাওয়াবিদদের একাংশ। তবে বুধবার সন্ধ্যায় পশ্চিমবঙ্গেই আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা সবথেকে বেশী ‘ইয়াস’-এর।
বুধবার সকাল থেকে ঘণ্টায় ৯০-১০০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইবে বলে জানিয়েছে হাওয়া অফিস। সঙ্গে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হবে দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায়। ঘূর্ণিঝড় স্থলভাগে আছড়ে পড়ার সময় তার গতিবেগ ঘণ্টায় ১৫৫-১৬৫ কিলোমিটার হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর। ইয়াসের আশঙ্কায় ইতিমধ্যেই মত্স্যজীবীদের যেমন সমুদ্র থেকে ফিরে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তেমনি তৈরি থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলাকারী বাহিনী এবং সেনাকেও। য়াসের জেরে ২৪ মে থেকে ২৬ মে পর্যন্ত সমুদ্র উত্তাল থাকবে। ফলে উপকূলবর্তী জেলার মানুষকে যাতে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়, সেই কাজও শুরু হয়েছে পুরোদমে। এদিকে ইয়াস আটকাতে তৈরি হচ্ছে রাজ্যও।
রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা মন্ত্রী জাভেদ আহমেদ খান জানিয়েছেন, সব জেলায় বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য আমাদের দফতরে যারা কাজ করছেন তাদের স্যাটেলাইট ফোন দেওয়া হয়েছে, যাতে তাদের বিপর্যয়ের সময় কোনও অসুবিধা না হয়। কর্মীদের দেওয়া হয়েছে পিপিই কিট। উপকূলের বাসিন্দাদের সাইক্লোন শেল্টার, ফ্লাড শেল্টারে আনার কাজ শুরু করেছে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীরা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে আমাদের দফতর এই কাজ শুরু করে দিয়েছে। বিদ্যুত্ দফতরের তরফে এই ঘূর্ণিঝড়ের সময় বিদ্যুত্ বিপর্যয় হওয়ার সম্ভাবনা ধরে নিয়ে সব রকমের প্রুস্তুতি নিয়েছে বিদ্যুত্ দফতর।
রাজ্যের বিদ্যুত্ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস জানিয়েছেন, তিনি বিদ্যুত্ ভবনের কন্ট্রোল রুমে নিজে থাকবেন। ২৫ মে থেকে বিদ্যুত্ ভবনের এই কন্ট্রোল রুম চালু থাকবে। কন্ট্রোল রুমের নম্বর হচ্ছে ৮৯০০৭৯৩৫০৩/ ৮৯০০৭৯৩৫০৪। এদিকে কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে ২০টি টিম তৈরি করা হয়েছে কলকাতাকে ‘ইয়াস’-এর বিপর্যয় থেকে রক্ষা করার জন্য। এই ২০টি টিমের প্রতিটিতে ৫জন করে সদস্য রয়েছেন। যারা কলকাতা থেকে কোনও বিপর্যয়ের খবর পেলেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাবেন। কলকাতা পুরসভার সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রেখে পুলিশের টিমটি কাজ করবে।
এছাড়া কলকাতা, হাওড়া, দুই মেদিনীপুরে ৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর সহ প্রায় ৮টি জেলায় বিপর্যয় মোকাবিলা ও জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীরা কাজে নেমে পড়েছেন। সাগর, ফ্রেজারগঞ্জ, দিঘা, মন্দারমণিতে চলছে মাইকে সতর্ক করার কাজ। মুখ্যমন্ত্রীও এই দুইদিন থাকবেন নবান্নের কন্ট্রোল রুমে। বিপর্যয়ের দিকে সমসময় নজর থাকবে তাঁর।