নজরবন্দি ব্যুরো: একসময় ছিলেন খামারের কৃষক, হয়ে গেলেন ভারতের তারকা ক্রিকেটার। হ্যাঁ, বলছিলাম ভারতের তরুণ উদীয়মান ক্রিকেটার শুভমান গিলের কথা। ভারতীয় ক্রিকেটের তাঁর আবির্ভাব ঘটে গেছে অনেকদিন আগেই। ভারতীয় ক্রিকেটে তাঁর আবির্ভাব লগ্নটা উজ্জলই ছিল।
আরও পড়ুন: নতুন জার্সিতে রোহিতদের ফার্স্ট লুক প্রকাশ্যে, কোথায় পাওয়া যাবে এই জার্সি?
কিন্তু সেই উজ্জ্বলতা আরো উজ্জ্বল হল এবারের আইপিএলে। এবারের আইপিএলে তিনি কি করেছেন সে রেকর্ড এখন সবারই জানা। এখন তিনি ব্যস্ত ইংল্যান্ডে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ খেলার জন্য। মাত্র ২৪ বছরে তাঁর এই উত্থানে ক্রিকেটপ্রেমী থেকে বিশেষজ্ঞরা সকলেই তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। কিন্তু প্রিয় এই ক্রিকেটারের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে জানার কৌতুহল সবারই থাকে। আজ আমরা জানাব আইপিএলে স্বপ্নের ফর্মে থাকা শুভমান গিলের অজানা কিছু কাহিনি।

৮ সেপ্টেম্বর ১৯৯৯ সালে পঞ্জাবের ফাজিলকায় জন্মগ্রহণ করা শুভমান পাঞ্জাবের মোহালির মানব মঙ্গল স্মার্ট স্কুল থেকে তার স্কুল জীবন শুরু করেন। কৃষক পরিবারের ছেলে হলে কি হবে শৈশব থেকেই শুভমান ক্রিকেটটা খুব ভালবাসতেন। ক্রিকেট অন্ত ছিল প্রাণ। তার আদর্শ ক্রিকেটার ছিলেন সচিন তেন্ডুলকর, রাহুল দ্রাবিড়দের মত কিংবদন্তীরা।
ক্রিকেটে ছেলের আগ্রহ দেখে শুভমানের কৃষক বাবা লখবিন্দর সিং ছেলের ক্রিকেট অনুশীলনের জন্য খামারে একটি মাঠ তৈরি করে দিয়েছিলেন। সেখানে খেলার জন্য একটি টার্ফ পিচও। সেই পিচে তিনি গ্রামের ছেলেদের খেলতে আসতে বলতেন। তাদের উৎসাহ দিতেন ছেলের উইকেট নেওয়ার জন্য। এবং তাদের চ্যালেঞ্জ দিতেন যদি তোমরা শুভমানের উইকেট নিতে পারো তাহলে তোমাদের ১০০ টাকা করে পুরস্কার দেব।
শুভমান গিল তার জীবনের কয়েকটা বছর কাটিয়েছেন গ্রামে। এক সাক্ষাকৎকারে শুভমান গিলের বাবা বলেছিলেন, তাঁর ছেলে শৈশবে কৃষিকাজে আগ্রহী ছিল এবং সেও কৃষক হতে চেয়েছিল। প্রতিদিন খেলার পাশাপাশি খামারের কাজও করত। খামারের গরুর খাওয়া দেওয়া থেকে তাদের পরিচর্যা ও করতো। কিন্তু আমিও ছোটবেলায় ক্রিকেটার হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমার স্বপ্ন পূরণ হয়নি। আজ সে স্বপ্নটা পূরণ করতে চাই ছেলের মধ্যে দিয়ে।
শুভমন তিন বছর বয়স থেকে ক্রিকেট খেলতেন। এই বয়েস থেকে ব্যাট-বলই ছিল তাঁর সঙ্গী। ঘুমোতেও যেতেন ব্যাট নিয়ে। ছেলের ইচ্ছা দেখে গিলের বাবা গ্রামের কৃষিকাজ ছেড়ে মোহালি চলে গিয়েছিলেন ছেলেকে একজন পেশাদার ক্রিকেটার তৈরি করতে। স্কুল থেকে কয়েক বছর কোচিং নেওয়ার পর তাঁর বাবা তাঁকে পাঞ্জাব ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের একাডেমিতে ভর্তি করেন। এখান থেকেই শুভমানের পথচলা শুরু হয়।

এরপর পাঞ্জাবের হয়ে অনূর্ধ্ব-১৬ ক্রিকেটে অভিষেক হয় তাঁর। বিজয় মার্চেন্ট ট্রফিতে অপরাজিত ডবল সেঞ্চুরি করেন। ২০১৪ সালে গিল পাঞ্জাবের আন্তঃজেলা অনূর্ধ্ব-১৬ প্রতিযোগিতায় একাই ৩৫১ রান করেন এবং নির্মল সিংয়ের সাথে ৫৮৭রানের রেকর্ড ওপেনিং পার্টনারশিপ করেন।
এরপর শুভমান আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ২০১৮-এ ভারতের হয়ে খেলেন। সেই বিশ্বকাপ জিতেছিল ভারত এবং বিশ্বকাপ জয়ের নায়কদের তালিকায় নাম ছিল শুভমানের।
শুভমানের পারফরম্যান্স এতটাই দুর্দান্ত ছিল যে বিরাট কোহলি তাঁর সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘এই বয়সে শুভমন যা করেছে তার ১০ শতাংশও আমি ছিলাম না।’
এক সময় ছিলেন খামারের কৃষক, হয়ে গেলেন ভারতীয় ক্রিকেটে সুপারস্টার!
মাত্র ২৪ বছর বয়সেই ভারতের হয়ে ওডিআই ক্রিকেটে ডবল সেঞ্চুরি করার কীর্তি গড়ে ফেলেছেন। দিনের পর দিন শুভমান দুর্দান্ত ভালো খেলছেন। এখন তাঁর লক্ষ্য ইংল্যান্ডে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ভালো কিছু করার। আর তাঁর দিকেই তো চেয়ে সমগ্র ভারতবাসীও।