নজরবন্দি ব্যুরোঃ করোনাভাইরাসের ত্রাস কমতে না কমতেই রাজ্যে হু হু করে বাড়ছে ডেঙ্গি। লাফিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গি সংক্রমণ! যেমন বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা, তেমনই বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। রাজ্যজুড়ে ক্রমশ থাবা বসাচ্ছে এই বিশেষ জ্বর। এই পরিস্থিতিতে বাঁচতে চাইলে ডেঙ্গি প্রতিরোধে প্রয়োজন সঠিক সতর্কতা। আর জানতে হবে প্রতিরোধের (Dengue Prevention) উপায়। তবে সচেতনতার অভাবে সেই বিষয়টি এখনও অন্তরায়েই রয়েছে।
আরও পড়ুনঃ ২৩ এ ভারতের মাটি থেকে বিশ্বকাপ জিতবে পাকিস্তান! এখুনি জানিয়ে দিলেন শোয়েব
ডেঙ্গি একটি ভাইরাসজনিত অসুখ। এই রোগের পিছনে রয়েছে এডিস ইজিপ্টাই মশার কামড়। ডেঙ্গির ফলে প্লেটলেট কমে গিয়ে অনেকসময়ই জীবন মরণ-বাঁচন ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে। তার মধ্যে ঘাটতি দেখা দিয়েছে প্লেটলেট। তিলোত্তমার বিভিন্ন ব্লাডব্যাঙ্কে ফুরিয়ে এসেছে প্লেটলেটের ভাঁড়ার। জানা গিয়েছে, মানিকতলা, SSKM, RG Kar সহ শিশুমঙ্গল, ইন্সটিটিউট অফ চাইল্ড হেলথ, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজেও প্লেটলেট তলানিতে। এদিকে ক্রমেই রাজ্যে জাঁকিয়ে বসছে ডেঙ্গি সংক্রমণ।

রাজ্যের অন্যান্য জেলাগুলোর অবস্থা আরও করুণ। সূত্রের খবর, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে মাত্র ৩৫ ইউনিট প্লেটলেট আছে। জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজে ৩৩ ইউনিট , মালদা মেডিক্যাল কলেজে ২১ ইউনিট, মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজেও রয়েছে মাত্র ২৭ ইউনিট প্লেটলেট।
ডেঙ্গি ভাইরাসের কয়েকটি ভাগ রয়েছে। ডেন ১ থেকে শুরু করে ডেন ২, ডেন ৩, ডেন ৪। এই চারটি ভাগ রয়েছে। এবার ডেঙ্গির এই প্রতিটি ভাইরাস নানাভাবে মানুষকে বিপদে ফেলে। সেক্ষেত্রে ভাইরাসের প্রতিটি ভাগই সমস্যার কারণ। তবে উদাসীন থাকার কারণে এই বিষয়টির দিকে মানুষের তেমন সচেতনতা নেই। এক্ষেত্রে রোগ সম্পর্কে অজ্ঞতা নানা সময়ে এই অসুখকে আরও জটিল করে তোলে।
উপসর্গ : চিকিৎসকদের মতে, এই অসুখ থাকলে জ্বর, গায়ে ব্যথা, চোখের পিছনে ব্যথা, গাঁটে গাঁটে ব্যথা, Rash ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়। এছাড়াও ডেঙ্গি হেমারেজিক ফিভারে রক্তপাত হয়। তবে মাথায় রাখতে হবে যে ডেঙ্গি জ্বরের সময়ে দ্রুত চিকিৎসা দরকার। আর ডেঙ্গি রোগীর খাবারের দিকে নজর দিতে হবে।

ডেঙ্গি মশা কখন কামড়ায়?
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, এডিস ইজিপ্টাই মশা অর্থাৎ ডেঙ্গি মশা কামড়ানোর কোনও নির্দিষ্ট সময় নেই। দিনের যে কোনও সময় এই মশা কামড়াতে পারে। তবে মানুষ ভাবেন শুধু দিনেরবেলায় এই মশা কামড়ায়। এই ধারণা একদম ভুল। আসলে ম্যালেরিয়ার মশা সাধারণত রাতে কামড়ায় তাই তার পরিপ্রেক্ষিতেই ডেঙ্গি মশাও সকালে কামড়ায় বলে একটা ধারণা তৈরি হয়েছে। তাই অহেতুক সকাল বা বিকাল হিসাবে ডেঙ্গি মশাকে ভাগ করার কোনও যৌক্তিকতা নেই।
ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করার কতদিন পরে রোগ লক্ষণ দেখা দেয়?
ডেঙ্গি রোগীর শরীরে ভাইরাস প্রবেশের পর তা নিজের সংখ্যা বাড়ায়। তারপর রোগের লক্ষণ দেখা দিতে থাকে। এক্ষেত্রে ভাইরাস শরীরে প্রবেশের দুই থেকে সাতদিনের মাথায় শরীরে রোগ লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে। তাই নিজে সতর্ক থাকুন। এভাবেই বাঁচতে পারবেন। আর লক্ষণ দেখা দিলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিন।
লাফিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গি সংক্রমণ! দিনে কোন সময় কামড়ায় ‘ডেঙ্গি মশা’? চাঞ্চল্যকর তথ্য চিকিৎসকদের
রোগ হলে কী করবেন? ডেঙ্গি ভয়াবহ অসুখ। সেক্ষেত্রে রোগ লক্ষণ দেখা দিলে টেস্ট (Test) করুন। তবে আশার কথা হল বেশিরভাগ সময় তেমন কোনও সমস্যা তৈরি হয় না শরীরে। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ প্যারাসিটামল খেলেই রোগ কমে যায়। তবে প্লেটলেট অনেকটা নেমে গেলে অবশ্যই হাসপাতালে এনে চিকিৎসা করতে হবে। দরকারে দিতে হয় প্লেটলেট। তাই সতর্ক হওয়ার চেষ্টা আপনাকে করতে হবে। এভাবে রোগ দূর হবে। আপনি ভালো থাকতে পারবেন।
প্রসঙ্গত, শনিবার রাজ্যে ডেঙ্গিতে মৃত্যু ১৫ বছরের কিশোরীর। মৃত কিশোরীর নাম কায়নাত পারভিন। সে হুগলির বৈদ্যবাটির বাসিন্দা। শনিবার রাজ্যে ৭,৫৪৫ জনের ডেঙ্গি পরীক্ষা হয়েছে। যার মধ্যে ৯৪৫ জনের রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে বলে খবর।