অর্ক সানাঃ কিছুদিন ধরেই ত্রিপুরায় নির্বাচন ঘিরে সরগরম রাজনৈতিক মহল। বিজেপি যেভাবে ভাবছিল নির্বাচন যে ঠিক সেভাবে হচ্ছেনা তা তাঁদের প্রচার কৌশলেই পরিষ্কার। অন্যদিকে তৃণমূল অনেক চেষ্টা করলেও ভোট বাক্সে সেই চেষ্টার প্রতিফলন হওয়ার সম্ভাবনা নৈব নৈব চ। অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল ত্রিপুরায় নিজেদের ভিত কিছুটা শক্ত করলেও তা এখনও কিছুটা দলের শৈশব অবস্থার মতই।
একদিকে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেস এবং সিপিআইএম জোট গড়েছে, ত্রিপুরায় এখন ট্রেন্ডিং ‘বামগ্রেস’, প্রাথমিকভাবে এগিয়ে থাকলেও ৬০ আসনের ত্রিপুরায় ৩০+ পাওয়ার অঙ্কে কিছুটা প্রতিকূলতা দেখতে পেয়ে বিজেপি তাঁদের সর্বোচ্চ নেতৃত্বকে মাঠে নামিয়েছে। পাশাপশি উপজাতীয় দল TIPRA বেশ ভাল রকম ভোট কাটার সম্ভাবনা। কমবেশি উপজাতি ভোটের ৮০ শতাংশ একাই দখলে রাখবে টিপরা মোথা।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন ত্রিপুরায় যত হিন্দু ভোট আছে অর্থাৎ এই রাজ্যে যে ৮৩ শতাংশ হিন্দু বসবাস করেন তাঁর ৬০ শতাংশ ভোট সরাসরি পড়বে বিজেপির বাক্সে। পাশাপশি যে ৯ শতাংশ মুসলিম বসবাস করেন তাঁর ৭৫ শতাংশ ভোট পড়বে বামগ্রেসের ভোট বাক্সে। জনসংখ্যার ভিত্তিতে ধরলে ত্রিপুরায় হিন্দু জনসংখ্যা প্রায় ৩০ লক্ষ ৬৪ হাজার। অন্যদিকে মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় ৩ লক্ষ ৩০ হাজার।

২০১৮ সালে এই রাজ্যে বিজেপি পেয়েছিল ৩৬ টি আসন। এবার একাধিক ইস্যুতে জেরবার বিজেপির ক্লিন ভাবে ম্যাজিক সংখ্যা পার করার সম্ভাবনা কম। বিজেপি নিশ্চিত ভাবে হিন্দু ২৫ টি আসন পেতে পারে। কিন্তু এরপর ম্যাজিক সংখ্যা পারকরতে যে ৫ টি আসন পেতে হবে তাঁর জন্যে বেশ পেতে হবে। আর এই বেগ তাঁদের পেতে হবে বাম বা কংগ্রসের জন্যে নয়, টিপরা মোথার জন্যে। এই উপজাতীয় দল মোট ভোটের ১৫-১৬ শতাংশ ভোট নিজের দখলে রাখবে তাঁর জন্যে বড় জ্যোতিষী হওয়ার দরকার নেই।
আর এই ১৫-১৬ শতাংশ ভোট নিয়েই মহারাজা প্রদ্যোত দেববর্মার দল ১২-১৩ টি আসন পেতে পারে। যার মধ্যে গোমতি জেলার ৭ টি বিধানসভা আসনের মধ্যে কমপক্ষে ৩ টি। সিপাহিজলা জেলার ৯টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ২ টি আসন ও খোয়াই জেলায় ২ টি আসন নিশ্চিত। এছাড়াও প্রথমবার নির্বাচনে লড়ে উনকোটি আর ধোয়াই জেলাতেও খাতা খোলার সম্ভাবনা প্রবল।
গতবার সিপিআই এম ১৬ টি আসন পেয়েছিল, এবারেও তারা ১৫-১৭ টি আসন নিশ্চিত ভাবেই পাবে। দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার ৭টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ৩ টি আসন নিশ্চিত। এছাড়াও উত্তর ত্রিপুরা জেলার ৬ টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ৩ টি আসন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বাম কং জোটের। সিপাহিজলা জেলার ৯টি বিধানসভা আসনের মধ্যেও ৩ টি আসন যে বামেরা পাবেই তা ধরেই নিয়েছেন রাজনৈতিক বোদ্ধারা। উত্তর ত্রিপুরায় নির্দল প্রার্থীরাও পেতে পারে একটি আসন, যাকে আবার সমর্থন করছে বাম কংগ্রেস।
উপজাতীয় ভোটই এক্স ফ্যাক্টর, ত্রিপুরায় বাম-বিজেপি ৫০-৫০, তৃণমূল শূন্য!
সব মিলিয়ে বিজেপি বিরোধীরা ২৯-৩১ টি আসন পাওয়ার সম্ভাবনা, কাজেই এককভাবে বিজেপির পক্ষে ৩০+ করা কিছুটা মুশকিল এবার। তাই কিছুটা অনিশ্চিত ভাবেই নির্বাচনে যাচ্ছে বিজেপি। আগামীকাল ভোটগ্রহণ। বিগত দিনের ভোট গ্রহণের যে ভয়াবহ চিত্র সামনে এসেছে বিরোধীদের কাছে তা যদি এবারেও একই থাকে তাহলে বিজেপি ৩৫+ নিশ্চিত কিন্তু ভোট যদি স্বাভাবিকভাবে হয়? উত্তর মিলবে ফলাফলের দিন!