ভোটারদের বিশেষ নিবিড় সংশোধন (SIR) ঘিরে বিতর্কের মাঝেই বড় ঘোষণা। ৮৫ বছর বা তার বেশি বয়সি, অসুস্থ এবং বিশেষ ভাবে সক্ষম ভোটারদের আর শুনানিকেন্দ্রে যেতে হবে না— তাঁদের বাড়িতেই গিয়ে শুনানি সম্পন্ন করা হবে। সোমবার এই মর্মে বিজ্ঞপ্তি জারি করল Election Commission of India-এর অধীন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (CEO) দফতর। আগেই নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া থাকলেও, এ বার তা লিখিত নির্দেশে স্পষ্ট করে জানানো হল।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, উপরোক্ত তিন শ্রেণির ভোটার অনুরোধ জানালে তাঁদের শুনানিকেন্দ্রে ডাকা হবে না। সংশ্লিষ্ট এলাকার বিএলও, ইআরও ও এইআরও-দের বিষয়টি নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদি কোনও কারণে নোটিস পাঠানো হয়ে থাকে, তবে ওই ভোটারের সঙ্গে যোগাযোগ করে শুনানিকেন্দ্রে না আসার অনুরোধ জানাতে হবে এবং পরবর্তীতে বাড়িতে গিয়ে নথি যাচাই ও শুনানি শেষ করতে হবে।

তবে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরও একটি প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে— ‘অসুস্থতা’ বলতে ঠিক কোন কোন শারীরিক অবস্থাকে ধরা হবে, তার কোনও নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা নেই। অর্থাৎ, কতটা অসুস্থ হলে শুনানিকেন্দ্রে না যাওয়ার ছাড় মিলবে— সে বিষয়ে কমিশনের তরফে স্পষ্ট দিশানির্দেশ এখনও অনুপস্থিত।
প্রসঙ্গত, বয়স্ক ভোটারদের কথা বিবেচনা করে আগেই কমিশনের কাছে চিঠি পাঠিয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক। বর্তমানে ৮৫ ঊর্ধ্বে ভোটারদের বাড়ি গিয়ে ভোটগ্রহণ করা হয়— সেই যুক্তিতেই শুনানি পর্বেও একই ব্যবস্থা রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কমিশন তাতে সম্মতি দিলেও, বাস্তবে রাজ্যে শুনানি শুরু হতেই দেখা যায় বহু প্রবীণ ভোটার লাইনে দাঁড়াচ্ছেন, এমনকি অ্যাম্বুল্যান্সে করে শুনানিকেন্দ্রে যাওয়ার ঘটনাও সামনে আসে। বিষয়টি ঘিরে কমিশনের ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে এবং রাজনৈতিক মহলেও সমালোচনা শুরু হয়।
এই আবহেই সোমবার দুপুরে সিইও দফতরে গিয়ে দাবিপত্র জমা দেয় শাসকদলের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল। দাবিপত্রে প্রবীণ, অসুস্থ ও বিশেষ ভাবে সক্ষম ভোটারদের বাড়িতে গিয়ে শুনানি নিশ্চিত করার কথা বলা হয়। তার পরেই বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ায় প্রশাসনিক মহলে বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ বলে ধরা হচ্ছে।


এ দিকে কমিশন আরও নির্দেশ দিয়েছে, SIR চলাকালীন বুথস্তরের আধিকারিকদের (BLO) বুথে বসে পরিষেবা দিতে হবে। অভিযোগ ও আপত্তি গ্রহণের এই পর্যায়ে ফর্ম ৬, ৭ ও ৮ জমা নেওয়া সহজ করতে সপ্তাহে তিনটি কর্মদিবসে অন্তত দু’ঘণ্টা এবং ছুটির দিনে চার ঘণ্টা করে বুথে উপস্থিত থাকতে হবে বিএলও-দের।
নিরাপত্তা সংক্রান্ত দিকেও কড়া বার্তা দিয়েছে কমিশন। শুনানিকেন্দ্রে উপযুক্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাজ্য পুলিশের ডিজিপি ও কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুনানিতে রাজনৈতিক দলের বিএলএ-দের প্রবেশের বিষয়ে কমিশনের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। আপাতত অন্য রাজ্যের মতো এখানেও বিএলএ-দের প্রবেশে অনুমতি নেই। শুনানিতে বাধা এলে ইআরও/এইআরও পদক্ষেপ নেবেন এবং সংশ্লিষ্ট ডিইও রিপোর্ট দেবেন বলে কমিশন সূত্রে জানানো হয়েছে।

সব মিলিয়ে, বাস্তব চিত্রের সঙ্গে নীতিগত সিদ্ধান্তের ফাঁক মেটাতেই এই বিজ্ঞপ্তি— এমনটাই মনে করছেন প্রশাসনিক মহল। এখন দেখার, মাঠপর্যায়ে এই নির্দেশ কতটা দ্রুত ও কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হয়।








