নজরবন্দি ব্যুরোঃ “দিলীপবাবু হলেন পাগলাবাবু”, নাম নিয়ে টানাটানি-লড়াই-কটাক্ষ-পাল্টা কটাক্ষ। ভাইপো থেকে খোকাবাবু। নাম নিয়ে ২১এর ভোটের আগে এ এক নয়া লড়াইয়ে নেমেছে বিজেপি-তৃণমূল। কটাক্ষ পাল্টা কটাক্ষের খেলা এখন আদালতের দরজা পর্যন্ত গড়িয়েছে। সোমবার রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘খোকাবাবু’ বলে মন্তব্য করলে ভোট ময়দানে উত্তেজনার পারদ ফের চড়েছে।
আরও পড়ুনঃ ২ ডিসেম্বর রাজ্যে প্রথম কো ভ্যাকসিনের টিকা নেবেন ফিরহাদ হাকিম।
এবার খোকাবাবুর পাল্টা দিলীপ ঘোষকে ‘পাগলাবাবু’ বলে খোঁচা তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। ভাইপো না বলে সাহস থাকলে তাঁর নাম ধরে অভিযোগ করুন বিজেপি নেতারা। রবিবার সাতগাছিয়ার সভা থেকে এমনই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিষেকের চ্যালেঞ্জের জবাবে তাঁকে এবার ‘খোকাবাবু’ বলে কটাক্ষ করলেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। এমনকি কটাক্ষ করে বললেন, ‘উনি কোলে চড়ে এসে সাংসদ হয়েছেন।’
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করে এ দিন দিলীপ বলেন, ‘ভাইপো বলেছে তো কী হয়েছে? আদর করে লোকে ভাইপো বলছে। দিল্লিতে তো যুবরাজকে পাপ্পু বলা হয়, সেটা বললে ভালো হবে? আমি ভাইপো বলছি না, আমি বলছি খোকাবাবু। কোলে চড়ে উনি রাজনীতিতে এসেছে, এখনও কোলই আছেন। যে লোকেরা ওনার পার্টির জন্য প্রাণ দিল, রক্ত দিল, তাঁরা আজকে রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে, হাতজোড় করে বাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকছে। আর উনি কোলে চড়ে এসে রাজনীতিতে এসে এমপি হয়ে গেলেন ।
“দিলীপবাবু হলেন পাগলাবাবু”, মানুষ সব জানেন।’ এই মন্তব্যেরই পাল্টা তীব্র আক্রমণ তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের । তাঁর কটাক্ষ, ‘দিলীপবাবু হলেন পাগলাবাবু। উনি একটা মস্তিষ্কবিকৃত লোক। এইভাবে তিনি কেন বিকৃত মানুষের পরিচয় দিচ্ছেন । উনি তো একটা রাজ্য সভাপতি। তার কাছ থেকে মানুষ মার্জিত ভাষা পছন্দ করেন। উনি যত বিকৃত ভাষায় কথা বলবেন ততই আমাদের লাভ।’ এরপর পার্থ চট্টোপাধ্যায় যুব তৃণমূল সভাপতির সমর্থনে বলেন, ‘উনি দিনের পর দিন খারাপ কথা বলে যাবেন আর তার উত্তর যদি অভিষেক দেয়, তাহলেই মুশকিল! ওনার সাহস নেই বলেই উনি কখনও ভাইপো, কখনও খোকাবাবু বলে যাচ্ছেন। অভিষেকের সাহস আছে, তাই অভিষেক বলেছে ।
যা দেখছে তাই বলেছে। দিলীপবাবু আগে সুস্থ মন নিয়ে চলুন তারপরই ওনার এত কথার উত্তর দেব।’ শুধু মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ই নন, দিলীপের খোকাবাবু কটাক্ষের জবাব দিয়েছেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষও। বিজেপি রাজ্য সভাপতিকে তাঁর জবাব, ‘কোলে চড়ে এসে বিধায়ক হয়েছে কৈলাস বিজয়বর্গীয়, মুকুল রায়ের ছেলেরা। এরকম নামের লিস্ট দিতে পারি। উনি ‘খোকাবাবু’ বলছেন বলুন, মে মাসে খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন দেখবেন। কৈলাস বিজয়বর্গীয় বার বার ভাইপো বলছিলেন, চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল অভিযোগ করলে নামটা বলুন। তাহলে মানহানির মামলা করে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরানো যাবে। বার বার এক একটা নাম দিয়ে কী বলা হল, তাতে কিছু আসে যায় না।
খোকাবাবু তো আপনার পার্টিতে আছেন। যিনি বান্ধবীর আঁচল ছাড়া কথা বলতে পারেন না। তাঁর ফ্ল্যাটেই আপনার নেতারা যাচ্ছেন। আপনি সেখানে মধ্যাহ্নভোজ খেতে ছুটছেন।’ বিজেপির তোলা একাধিক অভিযোগেরও জবাব দেন তৃণমূল মহাসচিব । বিজেপি নেতা সাংসদদের মুখে এখন নয়া দাবি, ডিসেম্বরেরই তৃণমূল সরকার সংখ্যালঘু হয়ে পড়বে । এদিন সকালে একসুরে ৭ থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে সরকার পড়ে যাওয়ার দাবি তোলেন বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসু ও সৌমিত্র খাঁ ।
বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ দাবি করেন, তৃণমূলের এখন যা অবস্থা যে কোনওদিন মুখ্যমন্ত্রীকে রাজভবনে ডেকে সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দিতে বলবেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় । বিজেপির মতে, যেভাবে দল ছেড়ে বেরোচ্ছেন বিধায়করা তাতে আস্থা প্রমাণে ব্যর্থ হয়ে ধসে পড়বে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল সরকার । ১৪৯ বিধায়কের সমর্থন দেখানোও তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। বিজেপির এই দাবিকেই অলীক, দিবাস্বপ্ন বলে প্রবল কটাক্ষ করেছেন পার্থ । বলেন, ‘বিজেপিতে মূর্খের দল। কেউ যেন ভুলে না যান যে আমাদের ২২২ জনের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। কে কি বলেছে আমরা অতটা ভাবিত নই।’