ঢাকায় এক জনসভায় দেওয়া বক্তব্যে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের স্পর্শকাতর প্রসঙ্গ টেনে আনলেন বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ। সোমবার রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত সমাবেশে তিনি দাবি করেন, ভারতবিরোধী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিগুলিকে আশ্রয় দেওয়া হবে এবং ‘সেভেন সিস্টার্স’কে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করা হবে। বক্তব্যটি ঘিরে তাৎক্ষণিকভাবে বিতর্ক ছড়ায়।
‘সেভেন সিস্টার্স’ বলতে ভারতের উত্তর-পূর্বের সাত রাজ্য—অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড ও ত্রিপুরা—কে বোঝানো হয়। এই অঞ্চলের সঙ্গে বাংলাদেশের কৌশলগত যোগসূত্রও রয়েছে, কারণ আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম—এই চার রাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের স্থলসীমান্ত যুক্ত। ফলে ওই মন্তব্যকে বিশেষভাবে সংবেদনশীল হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকেরা।

সমাবেশে আবদুল্লাহ বলেন, “আমরা বিচ্ছিন্নতাবাদী ও ভারতবিরোধী শক্তিগুলোকে আশ্রয় দেব, তারপর ভারতের সেভেন সিস্টার্সকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করব।” তাঁর বক্তব্যের পরে উপস্থিত জনতার একাংশের মধ্যে উল্লাসও লক্ষ্য করা যায়—যা বিতর্ককে আরও বাড়িয়ে দেয়।
ভারতীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলি অতীতেও অভিযোগ করেছে যে উত্তর-পূর্ব ভারতে সক্রিয় কিছু সশস্ত্র গোষ্ঠী এক সময় বাংলাদেশকে আশ্রয়স্থল, যাতায়াতের পথ ও লজিস্টিক সহায়তার কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করত—বিশেষত ১৯৯০-এর দশকের শেষভাগ ও ২০০০-এর দশকের শুরুর দিকে। সেই সময়ে সীমান্তের ওপারে শিবির, নিরাপদ ঘাঁটি ও সহায়তামূলক নেটওয়ার্কের অস্তিত্বের কথা বিভিন্ন রিপোর্টে উঠে আসে।
বিশেষ করে ত্রিপুরা প্রসঙ্গে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বারবার ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট অব ত্রিপুরা (NLFT) এবং অল ত্রিপুরা টাইগার ফোর্স (ATTF)-এর মতো গোষ্ঠীর সঙ্গে বাংলাদেশের ভেতরে থাকা শিবির ও হ্যান্ডলারদের যোগাযোগের অভিযোগ তুলেছে। নিরাপত্তা সূত্রের মতে, হামলার পর সদস্যরা সীমান্ত পেরিয়ে পালিয়ে যেত এবং সেখানে প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সংগ্রহের ব্যবস্থা চলত।


যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সীমান্ত নিরাপত্তা ও সহযোগিতার ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে বলে সরকারি স্তরে দাবি করা হয়, তবু ঢাকার এই বক্তব্য নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে। কূটনৈতিক মহল এখন দেখছে—এই মন্তব্যের পর বাংলাদেশ সরকারের আনুষ্ঠানিক অবস্থান কী হয় এবং বিষয়টি কীভাবে সামাল দেওয়া হয়।









