২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা দখল করবে বিজেপি—কলকাতায় তিন দিনের সফরে এসে এমনই আত্মবিশ্বাসী দাবি করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তাঁর বক্তব্য, ভোটের পরিসংখ্যান ও রাজনৈতিক বাস্তবতা বিশ্লেষণ করেই এই দাবি করা হচ্ছে। তবে এই বক্তব্য ঘিরেই নতুন করে উঠে এল পুরনো প্রশ্ন—বিজেপি কি আদৌ বাংলা জিততে চায়, নাকি তৃণমূলের সঙ্গে কোনও অঘোষিত সমঝোতা রয়েছে?
রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, বারবার হাইভোল্টেজ প্রচার সত্ত্বেও নির্বাচনের ফল বিজেপির পক্ষে না যাওয়ার পিছনে সংগঠনের দুর্বলতা, নেতৃত্বের অভাব এবং জনসংযোগের ঘাটতি রয়েছে। আবার অন্য একটি অংশের ধারণা, কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসকদলের মধ্যে ‘সেটিং’ তত্ত্বই এর কারণ। এই অভিযোগ সামনে রেখেই মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠকে অমিত শাহের কাছে সরাসরি প্রশ্ন রাখা হয়।
জবাবে শাহ বলেন, “আমি যখন বলছি ২০২৬ সালে বাংলায় বিজেপি সরকার গড়বে, তার পেছনে যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে।” এরপর তিনি একের পর এক নির্বাচনের ফল তুলে ধরেন—২০১৪ সালের লোকসভায় ১৭ শতাংশ ভোট ও ২টি আসন, ২০১৬ বিধানসভায় ১০ শতাংশ ভোট ও ৩ জন বিধায়ক, ২০১৯ লোকসভায় ৪১ শতাংশ ভোট, ২০২১ বিধানসভায় ৭৭টি আসন এবং ২০২৪ লোকসভায় ৩৯ শতাংশ ভোট ও ১২টি আসন। তাঁর দাবি, এই ধারাবাহিক বৃদ্ধিই প্রমাণ করে যে বিজেপি এখন রাজ্যের প্রধান বিরোধী শক্তি।
শাহের বক্তব্য, “এই রাজনৈতিক পরিবর্তনের ফলে কংগ্রেস রাজ্যে কার্যত শূন্য হয়ে গেছে, বামেদের ভোটব্যাঙ্কও ভেঙে পড়েছে।” তাঁর মতে, এই বাস্তবতার উপর দাঁড়িয়েই বিজেপি ২০২৬ সালে বিপুল আসনে জিতে সরকার গঠন করবে।
ভোটারদের উদ্দেশে আহ্বান জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “কংগ্রেস, বাম এবং তৃণমূল—তিন দলকেই সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাংলা ক্রমশ পিছিয়েছে। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির দিকে তাকান—সুশাসন ও উন্নয়ন সেখানে স্পষ্ট। একবার আমাদের পূর্ণ সমর্থন দিয়ে দেখুন।”


অমিত শাহের এই বক্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাঁকুড়ার জনসভা থেকে তিনি কটাক্ষ করে বলেন, “বলছেন ‘সোনার বাংলা’ বানাবেন। অথচ ওড়িশার মতো রাজ্যে বাংলায় কথা বললেই পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর অত্যাচার হয়। আর আপনারা বাংলার ভবিষ্যৎ ঠিক করবেন?”
সব মিলিয়ে, ২০২৬ বিধানসভা ভোটের আগে ‘বাংলা জয়’ বনাম ‘সেটিং’ তত্ত্ব—এই বিতর্কই যে আগামী দিনে রাজ্যের রাজনীতিতে আরও জোরদার হতে চলেছে, তা স্পষ্ট।










