নজরবন্দি ব্যুরোঃ করোনা আবহে কেমন হতে চলেছে কলকাতার দূর্গাপুজো! কেমনহবে মণ্ডপ! কি হবে নিরাপত্তার, কোন কোন বিধি মানতে হবে সবাইকে সব কিছু নিয়ে আজ নির্দেশিকা জারি করল নবান্ন।গাইডলাইনে উল্লেখ রয়েছে, খোলামেলা প্যান্ডেল করতে হবে। দর্শনার্থীদের ঢোকা এবং বেরনোর রাস্তা আলাদা করতে হবে। মাস্ক বাধ্যতামূলকএবং স্যানিটাইজারের ব্যবহারের ব্যবস্থা রাখতে হবে। করা যাবে না সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অঞ্জলি এবং দশমীতে বিসর্জনের ক্ষেত্রে একাধিক নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এছাড়া চলতি বছরে কার্নিভাল হবে না বলেও উল্লেখ রয়েছে ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আরও পড়ুনঃ পরিক্ষা স্থগিত রাখা যাবে না, সুপ্রিম কোর্টকে জানাল ইউপিএসসি।
বস্তুত বিশ্বব্যাপি কোভিড -১৯ অতিমারির প্রকোপ ভারতে এসে পড়ায় চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে লকডাউনের পথে হাটতে শুরু করে ভারত। এরপর জুনের মাঝামাঝি সময় থেকে দেশজোড়া লকডাউন ধীরে ধীরে শিথিলতার পথে হেটে চলেছে ভারত। আনলক-৪ পর্যায়ে দাঁড়িয়ে ভারতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যাটা প্রায় এক লক্ষ ছুঁইছুঁই, ৮২ হাজার ১৭০ জনের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে মৃত্যু হয়েছে ১০৮৩ জনের গত ২৪ ঘন্টায়। ভারতে করোনা পজিটিভ ৬০ লক্ষের গন্ডি ইতিমধ্যেই পার করে গিয়েছে।এমন আবহে অক্টোবর মাসের শেষের দিকে বাঙালির প্রাণের উৎসব দুর্গোপুজো হতে চলেছে।
নিউ নর্ম্যালে এসেও যে স্বস্তিতে নেই আমরা তা করোনার দৈনিক সংক্রমণের দিকে চোখ বোলালেই বোঝা যাবে। আর এই কারণেই নবান্ন দুর্গোপুজোকে কেন্দ্র করে গাইডলাইন প্রকাশ করেছে। প্রসঙ্গত, জমায়েত এবং সামাজিক দূরত্ব বিধি পালনের ওপরে রাজ্য প্রশাসন প্রথম থেকেই জোর দিয়ে চলেছে, সঙ্গে মাস্ক পড়া বাধ্যতামূলক করে তুলেছে। আর এই কারণেই ইউজিসি যেখানে নভেম্বরে শিক্ষাঙ্গনে পঠনপাঠন শুরু করার সুপারিশ করেছে, নবান্ন উল্টো পথে হেটে ডিসেম্বরে শারিরীক দূরত্ব বিধি বজায় রেখেই অনলাইনে পঠনপাঠনের ওপরে জোর দিতে চাইছে।
অন্যদিকে কলকাতায় আনলক-৪ পর্যায়ে মেট্রো রেল পরিষেবা শুরু হলেও যাত্রীদের জন্য বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। লোকাল ট্রেনের চাকা এখনও রাজ্যে গড়ায় নি, মার্চ মাস থেকে বন্ধ লোকাল ট্রেন পরিষেবা। আনলক-৫ পর্যায়ে আগামী অক্টোবর মাসে এসে রাজ্যে লোকাল ট্রেন চলবে কিনা অনিশ্চিত। কেননা এক্ষেত্রে জমায়েত এবং সামাজিক দূরত্ব বিধি শিকেয় ওঠার সম্ভাবনা রয়েই যাচ্ছে। এর থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট যে রাজ্য প্রশাসন এই করোনা আবহে আশা আশঙ্কায় রয়েছে। সংক্রমণের উর্ধবমুখী গ্রাফ লাগামছাড়া হয়ে পড়লে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থেকেই নিউ নর্ম্যালে এসে আনলক-৫ রাজ্য প্রশাসন বাঙালির প্রাণের উৎসব ঘিরে ‘গো বাট স্লো ‘ নীতিতে এগিয়ে যেতে চাইছে।
করোনা আবহে কেমন হতে চলেছে কলকাতার দূর্গাপুজো! উল্লেখ্য ৪ দিন আগে কলকাতায় নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে বৈঠকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী বিভিন্ন পুজো কমিটিকে নির্দেশ দেন কিকি ব্যবস্থা রাখতে হবে পুজো মণ্ডপে। পাশাপাশি জানিয়ে দেন দর্শনার্থীদের জন্যেও বিধি। তিনি বলেন, খোলামেলা মণ্ডপ, প্রতিমার মাথায় চালা থাকবে। চারপাশ ঘিরতে হলে মাথা খোলা রাখতে হবে।সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। প্রবেশ-বাহিরের আলাদা পথ।
মণ্ডপে হাফ কিলোমিটারের মধ্যে আসা মানুষের জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্ক পরতেই হবে। পুজো উদ্যোক্তাদেরও মণ্ডপে মাস্ক ও স্যানিটাইজার রাখতে হবে। স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য ফেসশিল্ডের ব্যাবস্থা করতে হবে। অঞ্জলি সকলে একসঙ্গে দেওয়া যাবে না। প্রয়োজনে মাইকে মন্ত্রোচ্চারণ করে অঞ্জলি দিন। ভোগ বিতরণেও খেয়াল রাখতে হবে। সিঁদুর খেলার সময় ভেঙে নিতে নির্দেশ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, একসঙ্গে সকলে সিঁদুর খেলা নয়। পাশাপাশি তিনি জানিয়ে দেন, পুজোয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে না।
পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী পুজো কমিটিগুলোর জন্যে রাজ্য সরকারের তরফে ৫০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়ার ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, “আমাদের টাকা নেই পয়সা নেই সেটা ঠিক। কিন্তু আমি জানি পুজো কমিটিগুলো খুব প্রবলেমে রয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে একটা স্বল্প দান তো আমরা দিই। যদিও এটা দান নয় ভালবাসা। এবার যেহেতু আপনাদের সমস্যা একটু বেশি রয়েছে। এ বার রাজ্য সরকার ৫০ হাজার টাকা করে দেবে প্রত্যেকটা পুজো কমিটিকে”। সাথেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পুজো কমিটিগুলো খুব আর্থিক সংকটে রয়েছে তাই এ বছর দমকলকে কোনও ফি দিতে হবে না। পাশাপাশি পুরসভাও ফি নেবে না। এমনকি সিইএসসি ও রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদও বিদ্যুৎ মাশুলে ৫০ শতাংশ ছাড় দেবে!