বাংলা ভাষা বলার ‘অপরাধে’ প্রাণ হারাতে হল এক পরিযায়ী শ্রমিককে—এই অভিযোগ ঘিরে দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া। ওড়িশায় কাজ করতে গিয়ে বাংলাভাষী যুবককে ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে পিটিয়ে খুনের ঘটনায় মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর স্পষ্ট বার্তা—“বাংলা ভাষা বলা কোনও অপরাধ হতে পারে না।” শনিবার এক্স (টুইটার)–এ দেওয়া দীর্ঘ পোস্টে তিনি ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন এবং নিহত পরিবারের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন।
নিহত যুবকের নাম জুয়েল রানা। তিনি মুর্শিদাবাদের সুতি এলাকার বাসিন্দা। গত ২৪ ডিসেম্বর রাতে ওড়িশার সম্বলপুর–এ এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ। সহকর্মীদের বয়ান অনুযায়ী, কয়েকজন ব্যক্তি প্রথমে তাঁদের আধার কার্ড দেখতে চান। তার পরই জুয়েলকে ‘বাংলাদেশি’ বলে সন্দেহ করে মারধর শুরু হয়। গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে বাঁচানো যায়নি। ঘটনায় তাঁর আরও দুই সহকর্মী আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি।

ঘটনার খবর ছড়াতেই তৎপর হয় রাজ্য প্রশাসন। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ সুতি থানায় ‘জিরো এফআইআর’ দায়ের করে। ইতিমধ্যে ছ’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে রাজ্য পুলিশের একটি দল ওড়িশায় গিয়েছে।
এই প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, “প্রতিটি বিজেপি-শাসিত রাজ্যে বাংলাভাষী মানুষের উপর যে নির্মম অত্যাচার ও নিগ্রহ নেমে এসেছে, আমরা তার তীব্র নিন্দা জানাই। বাংলা ভাষা বলা কোনও অপরাধ হতে পারে না।” তিনি আরও জানান, নিগৃহীত ও সন্ত্রস্ত পরিযায়ী বাংলাভাষী পরিবারগুলির পাশে রাজ্য সরকার রয়েছে এবং প্রয়োজনীয় সব রকম সহায়তা দেওয়া হবে।
মমতা আরও স্পষ্ট করেন, মানুষের জীবনের কোনও মূল্য হয় না—তবু এই ধরনের মৃত্যুর ঘটনায় রাজ্য সরকার আর্থিক ক্ষতিপূরণের অঙ্গীকার রাখছে। জঙ্গিপুর–মুর্শিদাবাদ এলাকার একাধিক পরিযায়ী শ্রমিক ওড়িশা থেকে আতঙ্কে বাড়ি ফিরছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।


সব মিলিয়ে, জুয়েল রানার মৃত্যু শুধু একটি অপরাধের ঘটনা নয়—ভাষা, পরিচয় ও পরিযায়ী শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর প্রশ্ন তুলে দিল। আর সেই প্রশ্নের কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কণ্ঠে স্পষ্ট ঘোষণা—বাংলা ভাষা বলা কোনও দিনই অপরাধ হতে পারে না।








