নজরবন্দি ব্যুরোঃ কেন্দ্র-রাজ্য দ্বন্দ্বে ফেঁসে গেলেন আলাপন! আলাপনের বদলি আর সেই প্রসঙ্গে বিজেপির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ করছে সকল দল। গতকাল বাংলার মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় যখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধায়ের সঙ্গে রাজ্যের বিপর্যস্ত এলাকা পরিদর্শনে ব্যস্ত ঠিক তখন আচমকাই তাঁর বদলির নোটিস আসে দিল্লি থেকে। তার পর থেকে গত কয়েক ঘন্টায় রাজ্য রাজনীতিতে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে ‘আলাপনের বদলি’ প্রসঙ্গ।
আরও পড়ুনঃ আলাপনকে ছাড়বেন না মমতা, আজই দিল্লিতে পালটা চিঠি পাঠাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী
জরুরি তলব করে আগামী ৩১ মে দিল্লীতে কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। আর সেখানেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। এমাসের শেষেই রাজ্যের মুখ্যসচিবের মেয়াদ শেষ হতো আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কিন্তু গত বছরের করোনার সময় থেকে এবারের দ্বিতীয় ঢেউ, গতবারের আমফান থেকে এবারের ইয়াস, আলাপন যেভাবে কড়া হাতে সামলেছেন সব, এমনকি পের করেছেন ২১ এর নির্বাচনের মহারণ, তার পর তৃতীয় বারের জন্য সরকার গড়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চেয়েছিলেন আরও কমাস আলাপনই থাকুন রাজ্যের মুখ্যসচিব। সেই মত আবেদন করেছিলেন কেন্দ্রের কাছে এবং গত ২৪ তারিখে মুখ্যমন্ত্রী খোদ জানান কেন্দ্রের গ্রিন সিগ্ন্যাল এসেছে। আগামী ৩ মাস আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ই থাকবেন রাজ্যের মুখ্যসচিব।
কিন্তু গতকাল রাতের দিল্লির আচমকা নির্দেশে উলটে গেছে প্রায় সব হিসেব। আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় কে কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে আগামী ৩১ তারিখ সোমবার, সকাল ১০টায় তাঁকে দিল্লিতে কর্মিবৃন্দ ও প্রশিক্ষণ মন্ত্রকে হাজিরা দিতে হবে। রাজ্যকে বলা হয়েছে, ক্যাবিনেট কমিটির বৈঠকে আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে কেন্দ্রের কাজে নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাঁকে যেন রাজ্য সরকার মুখ্যসচিবের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়। ঘটনার প্রেক্ষিতে অনেকেই কালকের ঘটনার কথা তুলে আনছেন, কলাইকুন্ডায় মুখ্যমন্ত্রী এবং মুখ্যসচিবের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছিল নরেন্দ্র মোদিকে। মুখ্যসচিব নিজেও উপস্থিত থাকেননি বৈঠকে। তারই রেশ এই তড়িঘড়ি বদলি।
তবে এই ঘটনার পর থেকে শুধু তৃণমূল নয় বিজেপি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নিচ্ছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাম-কংগ্রেস সব দল। এমনকি প্রাক্তন আমলারাও নিজেদের রাগ উগরে দিয়েছেন কেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে। তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের বক্তব্য বিধানসভা ভোটে হেরে পশ্চিমবঙ্গবাসীর বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে চাইছে কেন্দ্র। একই দাবি সৌগত রায়েরও।
ঘটনার প্রতিবাদে বাম নেতা দীপঙ্কর জানিয়েছেন, ‘মোদী সরকার আক্রমণাত্মক সাম্রাজ্যবাদী শক্তির মতো আচরণ করছে। ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্ত একটি রাজ্যের মুখ্যসচিবকে দিল্লিতে টেনে আনাটা দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার ইতিহাসে অত্যন্ত নিম্নরুচির। সমস্তটাই বাংলার মানুষকে শাস্তির দেওয়ার জন্য, যেখানকার মানুষজন মো-শা (নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ)-এর বাংলা দখলকে রুখে দিয়েছে’।
প্রাক্তন আমলা জহর সরকারও একই কথা জানিয়েছেন, তিনিও মনে করছেন মুখ্যসচিবের মেয়াদ বাড়ানোর পর বিপর্যস্ত এক রাজ্যের সংকট কালে তাঁকে এভেব ডেকে পাঠিয়ে কি করতে চাইছেন মোদি-শাহ? আবার অনেকেই মনে করছেন রাজ্য-কেন্দ্রের সংঘাতের মাঝে পড়ে ফেঁসে গেলেন আলাপন!
কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরি অবাক কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে। ঘটনায় হতবাক প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি জানিয়েছেন, এখন রাজ্যে ভয়ঙ্কর বন্যা, কোভিড পরিস্থিতি এই সময়টা খুব এমার্জেন্সি পিরিয়ড। এ সময় যখন মুখ্যসচিব তাঁর দীর্ঘ দিনের কাজের অভিজ্ঞতাকে সামনে রেখে এই পরিস্থিতি মোকাবিলার দায়িত্বে রয়েছেন, এই সময়ে তাঁকে এভাবে বদলি করিয়ে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার কারন কি থাকতে পারে, তবে এই সব কিছুতে তিনি বিজেপির রাজণৈতিক প্রতিহিংসাকেই খুঁজে পাচ্ছেন।
কেন্দ্র-রাজ্য দ্বন্দ্বে ফেঁসে গেলেন আলাপন! বাম নেতা এবং আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য্য মনে করছেন এই বদলি হতেই পারে, কেন্দ্র চাইলে বলদি করতেই পারেন, কিন্তু তাঁর প্রশ্ন তাঁকে হঠাৎ করে এ ভাবে নিয়ে যাওয়ার কারণ কী? বিশেষ করে মুখ্যসচিবের যখন অবসরকালীন সময় এসে গিয়েছে।