ধূমপান মানেই ফুসফুসের ক্ষতি—এই ধারণা বহুল প্রচলিত। কিন্তু সাম্প্রতিক চিকিৎসা-পর্যবেক্ষণ জানাচ্ছে, ক্ষতির তালিকায় পাকস্থলীও রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডাভিত্তিক বিশিষ্ট গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট ড. জোসেফ সালহাবের মতে, ধূমপান পাকস্থলীর আস্তরণে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষত তৈরি করতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা, ধূমপানের সময় শ্বাসের সঙ্গে ঢোকা বিষাক্ত কণিকা খাদ্যনালী হয়ে পাকস্থলীতে পৌঁছায়। এই কণিকাগুলি পাকস্থলীর আস্তরণে রাসায়নিক প্রদাহ সৃষ্টি করে। পাশাপাশি নিকোটিন রক্তসঞ্চালন কমিয়ে দেয়, ফলে ক্ষতিগ্রস্ত কোষ দ্রুত সেরে উঠতে পারে না।
এর ফল হিসেবে সময়ের সঙ্গে গ্যাস্ট্রাইটিস, পেপটিক আলসার এবং গুরুতর ক্ষেত্রে পাকস্থলীর ক্যানসারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়ে যায়। ধূমপান যত দীর্ঘদিন চলবে, ক্ষতির সম্ভাবনাও তত বাড়বে—এমনটাই মত চিকিৎসকদের।
এখানেই শেষ নয়। চিকিৎসকেরা আরও সতর্ক করছেন ব্যথানাশক ওষুধের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের বিষয়ে। আইবুপ্রোফেন বা নেপ্রোক্সেনের মতো এনএসএআইডি ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া দীর্ঘদিন খেলে পাকস্থলীর দেওয়ালে প্রদাহ তৈরি হতে পারে। এর পরিণতিতে আলসার বা অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণের ঝুঁকি থাকে। তাই এই ওষুধগুলি সর্বনিম্ন মাত্রায় ও স্বল্প সময়ের জন্য নেওয়াই নিরাপদ।

অ্যালকোহলও পাকস্থলীর জন্য বড় শত্রু। অতিরিক্ত মদ্যপানে পাকস্থলীর আস্তরণ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়—যাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানে ‘অ্যালকোহল-রিলেটেড গ্যাস্ট্রাইটিস’ বলা হয়। এর লক্ষণ হিসেবে বমি বমি ভাব, পেটব্যথা ও আলসার দেখা দিতে পারে। সমস্যা ধীরে বাড়ে বলে অনেক সময় শুরুতে ধরা পড়ে না।
চিকিৎসকদের সারকথা—পাকস্থলী সুস্থ রাখতে ধূমপান বর্জন, অ্যালকোহল সীমিত করা এবং ওষুধের দায়িত্বশীল ব্যবহার অত্যন্ত জরুরি। হজম প্রক্রিয়া সুস্থ থাকলেই শরীর সুস্থ থাকে। ছোট কিন্তু সচেতন অভ্যাসই দীর্ঘমেয়াদে বড় অসুখের ঝুঁকি কমাতে পারে।









