ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ড ঘিরে তদন্তে নতুন মোড়। রবিবার ঢাকা পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, এই মামলার দুই প্রধান অভিযুক্ত—ফয়জল করিম মাসুদ এবং আলমগির শেখ—বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে গিয়েছে বলে প্রাথমিক তথ্য মিলেছে। পুলিশের দাবি, ময়মনসিংহ হয়ে সীমান্ত পেরিয়ে তারা ভারতে ঢোকে।
ঢাকা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এস এন নজরুল ইসলাম জানান, হত্যাকাণ্ডটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত। গুলি চালানোর পর অভিযুক্তরা একাধিকবার গাড়ি বদল করে স্থানীয় সহযোগীদের সহায়তায় ময়মনসিংহ সীমান্ত এলাকায় পৌঁছয়। সেখান থেকে হালুয়াঘাট সীমান্ত অতিক্রম করে তারা ভারতে প্রবেশ করে বলে পুলিশের দাবি।

নজরুল ইসলামের বক্তব্য অনুযায়ী, সীমান্ত পারাপারে ‘পূর্ণি’ নামে এক ব্যক্তির সাহায্য নেয় ফয়জল ও আলমগির। পরে ‘সামি’ নামে এক ট্যাক্সিচালকের গাড়িতে করে তারা মেঘালয়ের তুরা এলাকায় পৌঁছয়। ঢাকা পুলিশের দাবি, এই দুই সহযোগীকে ভারতীয় প্রশাসন আটক করেছে এবং তারা ভারতীয় নাগরিক।
তবে এই গ্রেপ্তার নিয়ে এখনও পর্যন্ত ভারতের তরফে কোনও সরকারি বিবৃতি পাওয়া যায়নি। ঢাকা পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেপ্তার হওয়া দু’জনকে বাংলাদেশে প্রত্যর্পণের বিষয়টি নিয়ে নয়াদিল্লি ও ঢাকার মধ্যে কূটনৈতিক স্তরে আলোচনা চলছে।
ঢাকা পুলিশের আশ্বাস, হাদি হত্যা মামলার তদন্ত আগামী ১০ দিনের মধ্যেই শেষ করার চেষ্টা চলছে। যদিও দুই মূল অভিযুক্ত বর্তমানে ঠিক কোথায় রয়েছে, বা তাদের বিরুদ্ধে কী ধরনের প্রত্যক্ষ প্রমাণ সংগ্রহ করা হয়েছে—সে বিষয়ে পুলিশ এখনও বিস্তারিত কিছু জানায়নি।


এই ঘটনার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, তারেক রহমান–এর দেশে ফেরার পর বিএনপির সংগঠনে নতুন গতি এসেছে। পাশাপাশি জামায়াত-ঘনিষ্ঠ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে উঠে আসা রাজনৈতিক শক্তিগুলির মধ্যেও নতুন সমীকরণ তৈরি হচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনুস–এর নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের বিরুদ্ধে ‘ভারতবিদ্বেষী আবহ’ তৈরির অভিযোগও উঠছে। নির্বাচন-পূর্ব সময়ে সেই আবহকে উসকে দিতেই কি অভিযুক্তদের সঙ্গে ভারতের নাম জুড়ে দেওয়া হচ্ছে—এই প্রশ্নও তুলছেন কয়েকজন পর্যবেক্ষক।
সব মিলিয়ে, হাদি হত্যা মামলার তদন্ত শুধু অপরাধমূলক দিক থেকেই নয়, আঞ্চলিক কূটনীতি ও রাজনীতির দিক থেকেও এখন বিশেষ নজরের কেন্দ্রে।








