নজরবন্দিঃ কাতার বিশ্বযুদ্ধে ব্রাজিল চ্যাম্পিয়ন, আর্জেন্টিনাও চ্যাম্পিয়ন! বিশ্বকাপ ফুটবল অদ্ভুত এক আসর। তথ্যপ্রযুক্তির চরম উৎকর্ষের এই যুগেও বিশ্বকাপ এলে লোকে কোন দৈববলে যেন তুকতাকে বিশ্বাস করা শুরু করে! যে লোকের মুখ থেকে বিজ্ঞান ছাড়া একটি শব্দও নিঃসৃত হয় না, বিশ্বকাপ এলে সেই লোককেই হয়তো দেখা যায় গণক হয়ে বসেছেন! নানা রকম সংখ্যা-উপাত্ত গণনা ও উত্তর-দক্ষিণ মিলিয়ে পছন্দের দলকে চ্যাম্পিয়ন বানাচ্ছেন কিংবা সেই চেষ্টা করছেন।
আরও পড়ুনঃ আজ নামছে আর্জেন্টিনা, মেসির সামনে একাধিক রেকর্ডের সুযোগ
কেউ আবার এককাঠি সরেস। বিশ্বকাপের কোন ভূতপূর্ব আমলে কী ঘটেছিল, আর সেবারের সঙ্গে কী কী ইঙ্গিত এবার মিলে যাচ্ছে, সেসব একসূত্রে গেঁথে চ্যাম্পিয়ন বানাচ্ছেন পছন্দের দলকে। শুধু চ্যাম্পিয়ন বানিয়েই ক্ষান্ত হচ্ছেন না, ফলাও করে পোস্ট করছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও। অথচ ওই লোকই হয়তো স্কুল-কলেজে বিজ্ঞান পড়ান, বাড়িতে সন্তানদের বাস্তবতা মেনে চলার পরামর্শ দেন।
ফুটবলের অন্তর্নিহিত শক্তি বলে যদি কিছু থেকে থাকে, সেটা বোধ হয় এটাই। বিশ্বকাপ এলেই মানুষ কীভাবে যেন পাল্টে যায়! যুক্তি ভুলে মরহুম অক্টোপাস ‘পল’-এর মতো কাউকে স্মরণ করে কিংবা পৃথিবীর কোনো কোনা থেকে টেনে বের করে, তার ভবিষ্যদ্বাণীতে পছন্দের দলের নাম দেখতে চায়। সত্যিই মানুষ কী বিচিত্র! অক্টোপাসের মতোই রং পাল্টায়।

আর পাল্টাবেই না-বা কেন? ইতিহাসও তো বেশ রসিক। দেখা যায়, আগের কোনো আসরে কিছু বিষয় এমনভাবে ঘটেছে, যার সঙ্গে এবারের আসরেও সেসব বিষয়ের বেশ ভালো মিল আছে। মানুষও আশায় বাঁচে। চোখের সামনে যখন এসব মিল ভেসে ওঠে, তখন তো পছন্দের দলের হয়ে গলা ফাটাবেই।ব্রাজিলের কথাই ধরুন। শুধু ধরলে হবে না, শক্ত করেই ধরতে হবে (ব্রাজিল সমর্থকদের)। ২০০২ বিশ্বকাপ হয়েছিল এশিয়ায়…বাকিটা নিশ্চয়ই সবার জানা! জাপান-কোরিয়া বিশ্বকাপের ইতিহাস ও পূর্বাপর বের করে এরই মধ্যে অনেকেই বুঝে গেছেন এবার ব্রাজিলই চ্যাম্পিয়ন!
আর্জেন্টিনার সমর্থকেরা রাগ করবেন না। আপনাদের জন্যও ব্যবস্থা আছে। তার আগে জানিয়ে রাখা যাক, এসব মাঠের খেলা নয়, যেখানে বিজয়ী নির্ধারিত হয়। এসব স্রেফ ঘটনাপঞ্জির খেলা, বলতে পারেন সমর্থকদের প্রচণ্ড টেনশনে কুঁকড়ে আসা মনকে একটু জাগিয়ে তোলার রসদ। যা–ই হোক, গৌরচন্দ্রিকা রেখে শুরু করা যাক। এক দেশে ছিল দুই…নাহ, দুই দেশে হয়েছিল এক বিশ্বকাপ। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায়। সেটি এশিয়ায় অনুষ্ঠিত প্রথম বিশ্বকাপ (২০০২)। আর সেই বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা ছিল হট ফেবারিট।
কাতার বিশ্বযুদ্ধে ব্রাজিল চ্যাম্পিয়ন, আর্জেন্টিনাও চ্যাম্পিয়ন!

শুধু ‘হট’ বললেও কম বলা হয়, একেবারে মচমচে কুড়মুড়ে ফেবারিট বলতে যা বোঝায় ঠিক তাই! দু-একজন অখ্যাত ছাড়া প্রায় সবাই প্রতিষ্ঠিত তারকা—রবার্তো আয়ালা থেকে হুয়ান পাবলো সোরিন, হাভিয়ের জানেত্তি, হুয়ান সেবাস্তিয়ান ভেরন, পাবলো আইমার, হারনান ক্রেসপো, গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা…এমনকি ক্লদিও ক্যানিজিয়ার মতো তারকাকে বয়সের কারণে ডাগআউটে বসিয়ে রাখা হয়েছিল।
আর ছিলেন একজন ‘নতুন ম্যারাডোনা’—আসল মানুষটি অবসর নেওয়ার পর প্রতি বিশ্বকাপেই যেভাবে একজনকে নতুন ম্যারাডোনা খুঁজে বের করা হতো, বরাবরের মতো সেবারও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। আরিয়েল ওর্তেগার ঘাড়ে সেবার চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল ‘নতুন ম্যারাডোনা’ তকমা।