বাংলাদেশে ফের ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ঘিরে ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড। ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলায় এক হিন্দু যুবককে প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ। ঘটনাটি ঘটে বৃহস্পতিবার রাতে। কিন্তু এত বড় ঘটনার পরও শুক্রবার পর্যন্ত পুলিশের তরফে কোনও মামলা রুজু করা হয়নি, যা নিয়ে বাংলাদেশজুড়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই আতঙ্ক ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই লিখেছেন, দৃশ্য এতটাই ভয়াবহ যে কয়েক সেকেন্ডের বেশি দেখা সম্ভব হয়নি।

কে নিহত, কোথায় ঘটনা
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নিহত যুবকের নাম দীপুচন্দ্র দাস। তিনি ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার ডুবালিয়া পাড়া এলাকার বাসিন্দা। স্থানীয় একটি ছোট গার্মেন্টস সংস্থায় কাজ করতেন তিনি।
ঘটনাটি ঘটে ভালুকা থানার অন্তর্গত এলাকায়, একটি ব্যস্ত মহাসড়কের ধারে। ঘটনার সময় সেখানে শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি।
কী অভিযোগ তোলা হয়েছিল
পুলিশের প্রাথমিক বক্তব্য অনুযায়ী, দীপুচন্দ্র দাসের বিরুদ্ধে ইসলামের নবী মহম্মদ সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করার অভিযোগ ওঠে। তবে কোথায়, কখন, কার সামনে তিনি এমন মন্তব্য করেছিলেন—সে বিষয়ে কোনও নির্দিষ্ট বা যাচাইযোগ্য তথ্য এখনও সামনে আসেনি।


সরকারি সূত্র জানাচ্ছে, অভিযোগ ওঠার পর বৃহস্পতিবার রাতে তাঁকে প্রথমে কারখানা থেকে বের করে মারধর করা হয়। এরপর অচেতন অবস্থায় তাঁকে একটি গাছে ঝুলিয়ে ফের মারধর করা হয়। পরে তাঁর শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এই ঘটনার জেরে এলাকায় তীব্র যানজট তৈরি হয়।
পুলিশের বক্তব্যে নতুন বিতর্ক
ভালুকা থানার ডিউটি অফিসার রিপন মিয়া স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “নবী সম্পর্কে কটুক্তির অভিযোগ ছিল। সেই কারণেই উত্তেজিত জনতা গণহত্যা করেছে।”

তবে এত বড় হত্যাকাণ্ডের পরও কেন পুলিশ স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলা দায়ের করেনি, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। পুলিশের বক্তব্য, নিহতের পরিবারের লোকজনের খোঁজ চলছে। তারা অভিযোগ দায়ের করলে তবেই মামলা রুজু করা হবে।
আইনজ্ঞ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলির মতে, প্রকাশ্যে হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে পুলিশের স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করা আইনত সম্ভব এবং প্রয়োজনীয়।
মব-হিংসা না কি পরিকল্পিত অপরাধ?
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অতীতে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে একাধিক সংখ্যালঘু নাগরিকের হত্যার ঘটনা সামনে এসেছে। বহু ক্ষেত্রেই পরে দেখা গিয়েছে, অভিযোগের কোনও প্রমাণ মেলেনি।
পুলিশেরই একাংশের মতে, এই ধরনের ঘটনা মূলত মব-সন্ত্রাস—যেখানে কাউকে লক্ষ্য করে অভিযোগ রটিয়ে দিয়ে জনতাকে উত্তেজিত করা হয়। তারপর গণহিংসার মাধ্যমে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়।
মানবাধিকার মহলের উদ্বেগ
এই ঘটনায় মানবাধিকার সংগঠন ও সংখ্যালঘু অধিকার কর্মীরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের বক্তব্য,
-
আইনের শাসন ভেঙে পড়ছে
-
ধর্মীয় অভিযোগকে হাতিয়ার করে সংখ্যালঘুদের টার্গেট করা হচ্ছে
-
পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলছে
এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ও দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়া ও নাগরিক সমাজে সরব প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে।








