কলকাতায় লিয়োনেল মেসির সফর ঘিরে যুবভারতীতে যে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছিল, তার রেশ এখনও কাটেনি। সেই ঘটনার প্রেক্ষিতেই কলকাতা হাই কোর্ট প্রশ্ন তুলেছে—লেকটাউনে যেখানে ৭০ ফুটের মেসির মূর্তি বসানো হয়েছে, সেই জমিটি কি সরকারি, না কি ব্যক্তিগত? প্রশ্ন উঠতেই শুরু হয়েছে খোঁজখবর। কিন্তু মঙ্গলবার সারাদিন লেকটাউন এলাকায় ঘুরেও স্পষ্ট কোনও উত্তর পাওয়া গেল না।
ভিআইপি রোড সংলগ্ন ভূগর্ভস্থ পথের উপরের অংশে তৈরি এই পার্কে দাঁড়িয়ে রয়েছে বিশাল মেসি মূর্তি। স্থানীয় বাসিন্দা, দোকানদার, পার্কে আসা সাধারণ মানুষ—প্রায় সকলের মুখে একই কথা, “এখানে যা হয়, সব সুজিতদাই দেখেন।” তবে জমির আইনি মালিকানা সম্পর্কে কেউই নিশ্চিত নন। নাম না করে অনেকেই দমকলমন্ত্রী সুজিত বসুর দিকেই ইঙ্গিত করছেন, কিন্তু প্রকাশ্যে কেউ দায় নিতে রাজি নন।
মঙ্গলবার দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু ছিলেন হুগলির পোলবায়। তাঁর সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো বার্তারও কোনও উত্তর মেলেনি। তাঁর ক্লাব শ্রীভূমি স্পোর্টিং কিংবা ঘনিষ্ঠ মহলেও কেউ জমির মালিকানা নিয়ে নিশ্চিত তথ্য দিতে পারেননি।
মেসির মূর্তি যে জমিতে, তার মালিক কে?

এই পার্কটি আগে অনেকের কাছে ‘বিবেকানন্দ পার্ক’ নামে পরিচিত ছিল। এখন স্থানীয়দের একাংশের মুখে মুখে তার নাম হয়ে উঠেছে ‘মেসি পার্ক’। মেসি কলকাতা ছাড়ার ১০ দিনের বেশি সময় কেটে গেলেও মূর্তির সামনে ছবি তোলার ভিড় এখনও চোখে পড়ার মতো। স্থানীয় শিক্ষিকা স্নিগ্ধা সেনের কথায়, “এখানকার উন্নয়নের কাজ বরাবরই সুজিতদা করেছেন। তাই মানুষ ধরে নিচ্ছে, সবটাই তাঁর তত্ত্বাবধানে।”
সোমবার হাই কোর্টে রাজ্যের তরফে আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, মেসির মূর্তির জমির মালিকানা সম্পর্কে তাঁর কাছে নির্দিষ্ট তথ্য নেই। মঙ্গলবারও তিনি একই অবস্থান বজায় রাখেন। পাশাপাশি তিনি বলেন, কলকাতার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে বহু ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বের মূর্তি রয়েছে, সরকারি জমিতেও। এই প্রশ্ন নতুন নয় বলেই তাঁর দাবি।


তবে বিষয়টি এখানেই থেমে থাকছে না। জমিটি পূর্ত দফতরের, না কি কলকাতা পুরসভার—তা নিয়েও স্পষ্টতা নেই। দক্ষিণ দমদম পুরসভার জনপ্রতিনিধি এবং রাজ্যের পূর্তমন্ত্রী—কেউই মঙ্গলবার নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি। পূর্তমন্ত্রী পুলক রায় জানান, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে পরে জানানো হবে।
সব মিলিয়ে, আদালতের প্রশ্নের পর লেকটাউনের মেসি মূর্তিকে ঘিরে এক নতুন বিতর্কের জন্ম হয়েছে। জমির মালিকানা নিয়ে সরকারি স্তরে স্পষ্ট জবাব না আসা পর্যন্ত এই ধোঁয়াশা কাটবে না বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মহলের একাংশ।










