অর্ক সানা, সম্পাদক(নজরবন্দি): মানুষই ইতিহাস রচনা করেন, ‘২১ নির্বাচনে BJP প্রাপ্তি তৃতীয় স্থান নয়তো? লক্ষ ২০২১ বিধানসভা নির্বাচন; রাজ্যের যুযুধান দুই প্রতিপক্ষ ইতিমধ্যেই নেমে পড়েছে ভোট ময়দানে। এই যুযুধান দুই প্রতিপক্ষ হল তৃণমূল আর বিজেপি। রাজ্যের বিয়াল্লিশ টি আসনের মধ্যে গত লোকসভা নির্বাচনে ১৮টি আসন পেয়ে টগবগ করে ফুটছে গেরুয়া ব্রিগেড। সমর্থকরা অপেক্ষমান আর তো মাত্র কয়েকমাস, তারপরেই বাংলার মসনদে বিজেপি। এদিকে বাংলার বিজেপি বলতে মানুষ যাদের চিনত সেই রাহুল সিনহারা এখন পেছনের সারিতে।
আরও পড়ুনঃ মানুষই ইতিহাস রচনা করেন, ‘২১ নির্বাচনে BJP প্রাপ্তি তৃতীয় স্থান নয়তো?
ক্রমাগত আদি বিজেপি নেতারা আত্মত্যাগ করছেন তৃণমূল থেকে আগত নেতাদের যায়গা ছেড়ে দেওয়ার জন্যে। লক্ষ্য একটাই বাংলাকে সোনায় মুড়ে ফেলা অর্থাৎ সোনার বাংলা তৈরি করা! এই ধরুন বঙ্গ বিজেপিতে যদি সথে উৎকৃষ্ট তাত্বিক, যুক্তিবাদী নেতা কেউ থেকে থাকেন তিনি শমীক ভট্টাচার্য। সেই শমীক ভট্টচার্য কে বরাহ নন্দনের চলতি ভাষায় গালাগাল দিতে দিতে তেড়ে যাওয়া অর্জুন সিং এখন শমীকের থেকেও বড় বিজেপি নেতা!
রাহুল সিনহা কেই ধরা যাক, আজন্ম বিজেপি-র হাল ধরে থাকা এই নেতা সোনার বাংলা গড়ার উদ্দেশ্যে অনুপম হাজরার মত তৃণমূল নেতাকে হাসিমুখে পদ ছেড়ে দিলেন। ভোট বাংলায় একা দিলীপ ঘোষ ছাড়া আদি বিজেপির কেউ নেই সামনের সারিতে। যারা তৃণমূলে থাকাকালীন চোর তোলাবাজ ঘুষখোর ইত্যাদি বদনামে বিদ্ধ হতেন বিজেপির বাক্যবানে। তারাই এখন কমবেশি বিজেপির প্রথম সারির মুখ। যেমন মুকুল, অর্জুন, সব্যসাচী, শুভেন্দু, শোভন, রাজীব, সৌমিত্র এমনকি ছাত্র রাজনীতিতে সবথেকে বেশি তোলাবাজির বদনাম যার বিরুদ্ধে সেই শঙ্কুদেব পান্ডাও! আজ যেমন নব সংযোজন দীনেশ ত্রিবেদী।
এদিকে ভোট এখন শিয়রে, অঙ্ককষা শুরু হয়েছে কে জিতবে কে হারবে। বিজেপি লোকসভা নির্বাচনে এগিয়ে রয়েছে রাজ্যের ১২১ টি আসনে। কিন্তু মুশকিল হল এখন দিলীপ ঘোষের কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার স্বপ্ন কিছুটা নড়বড় করছে আচমকা বাম সামান্য নড়েচড়ে বসায়। কারন গত লোকসভায় বিজেপির যা ভোট বেড়েছিল গড় বলছে তাঁর সবই বাম ভোট। এবার কথা হল এই বামেরা রাম কেন বেছে নিয়েছিল? শুধু মমতা বন্দোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্যে? উত্তর না। তৃণমূলের মত শাসক দল কে পরাস্ত্র করার জন্যে অন্য একটি শাষক দলকে বেছে নিয়েছিল সাধারন বাম ভোটার।
এরপর লকডাউন, শ্রমিকের শতশত কিলোমিটার হাটা, বামেদের শ্রমজীবী ক্যান্টিন… আমফান! বড্ড ঘটনা বহুল ছিল ২০২০ সাল। সবথেকে বড় কথা হল এই একবছরে বাম ভোট যা রামে গিয়েছে তা যে বিজেপির ভোটব্যাঙ্ক হয়ে ওঠেনি তা বিজেপির অতিবড় নেতাও জানেন। সেই পরিস্থিতিতে ভোট ময়দানে প্রশ্ন উঠছে যাদের লড়াই ছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে তাঁদের লড়াই তো আর তৃণমূল পার্টি অফিসে থাকা চেয়ার টেবিল বা প্রতীকটার বিরুদ্ধে শুধু ছিলনা। লড়াই যেমন ছিল সার্বিক ভাবে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তেমনই নিজের নিজের এলাকায় শুভেন্দু-রাজীবদের বিরুদ্ধেও!
অন্যদিকে ব্র্যান্ড ফ্যাক্টর হয় নির্বাচনে। দিল্লিতে লোকসভার সব আসনে জয় পেয়ে এবং ৭০ আসনের বিধানসভায় ৬৫ আসনে এগিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত মাত্র ৮টি আসন পেয়ে দিল্লি বিধানসভায় থেমে গেছে বিজেপি-র বিজয়রথ। বিজেপি-র প্রচারে কখনই প্রাধান্য পায়নি কর্মসংস্থান, স্বনির্ভরতা বা উন্নয়নের ইস্যু। সর্বদাই বিজেপি-র প্রচার কৌশল নির্ভর করে দেশপ্রেমের জিগির, পাকিস্তান, দেশদ্রোহী ইস্যুর। কমবেশি সব বিজেপি নেতাই বোঝানোর চেষ্টা করেন তাঁরা দেশপ্রেমিক আর বিজেপি বিরোধীরা দেশদ্রোহী! দিল্লীতে কেজরিওয়ালের প্রচার কৌশল ছিল প্রবল অরাজনৈতিক ভাবে চরম রাজনৈতিক! বিজেপির দেশদ্রোহী বা পাকিস্তান কোন ইস্যুকেই আমল না দিয়ে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আপ এর ভোট প্রচারের হাতিয়ার ছিল উন্নয়ন। তার সেই উন্নয়নের ঝড়েই উড়ে গেছে অন্য সব গা গরম করা ইস্যু।
রাজ্যেও একই ভাবে বাদ সাধবে ব্র্যান্ড মমতা! কারন ব্র্যান্ড মমতার বিকল্প বিজেপি-র হাতে নেই, আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্বাচন কে পাখির চোখ করেছেন সেই উন্নয়ন কে হাতিয়ার করেই! অন্যদিকে বেকারত্ব, কর্মসংস্থান বা সার্বিক উন্নয়নের গল্প শিকেয় তুলে ভারত মাতার জয়ধ্বনি, জয় শ্রীরাম, বা পিসি ভাইপো হটাও ইস্যুই হাতিয়ার বিজেপির। পাশাপাশি পাকিস্থান তো বিজেপি-র কপিরাইট করা ইস্যু, গতকালই অমিশ শাহ পাকিস্তানের গল্প শুনিয়ে গেছেন ঠাকুর নগরের সভায়! এদিকে সাংবাদিক সম্মেলন করে প্রচার করা নারদার ভিডিও উড়ে গেছে বিজেপির ইউটিউব চ্যানেল থেকে। সাথে চিটফান্ড দোষীদের ৯০ দিনের মধ্যে জেলে ঢোকাবেন হুঁশিয়ারি দেওয়া বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব যথারীতি ভুলে গেছেন তৃনমূলে থাকার সময় চিটফাণ্ড কির্তী করা কত ছোট বড় মাঝারি নেতা পদ্মবনে লুকিয়ে নিশ্চিন্তে দিন কাটাচ্ছেন! তাই ভোটের অঙ্ক বড্ড জটিল। সবার ওপরে মানুষ সত্য, মানুষই ইতিহাস রচনা করেন। তাই বলা যায়না আসন্ন নির্বাচনে মুখোমুখি লড়াই হল তৃণমূল বনাম বাম কংগ্রেস জোটের… বাম ভোটে ক্ষমতার স্বপ্ন দেখা বিজেপি হয়তো ফিরে গেল আগের জায়গাতেই! অর্থাৎ পুনর্মুষিক ভব…