২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের প্রস্তুতি আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করে দিল তৃণমূল কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-এর ১৫ বছরের শাসনকালের কাজের খতিয়ান—যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘উন্নয়নের পাঁচালি’—এ বার সরাসরি মানুষের দরজায় পৌঁছে দিতে নতুন কর্মসূচির ঘোষণা করলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কর্মসূচির নাম, ‘উন্নয়নের সংলাপ’।
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পয়লা জানুয়ারি থেকেই রাজ্যজুড়ে শুরু হবে এই কর্মসূচি। তৃণমূল নেতারা ‘মমতার দূত’ হিসেবেই ঘরে ঘরে যাবেন। তাঁদের হাতে থাকবে সরকারের কাজের রিপোর্ট কার্ড, সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর লেখা চিঠি। লক্ষ্য একটাই—গত দেড় দশকে রাজ্যের উন্নয়ন ও সামাজিক প্রকল্পের তথ্য সরাসরি মানুষের কাছে তুলে ধরা।

শুধু কর্মসূচি নয়, ভোটের স্লোগানও চূড়ান্ত করে ফেলেছে তৃণমূল। শুক্রবারের দলীয় বৈঠকে অভিষেক স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ২০২৬-এর ভোটে দলের স্লোগান হবে—‘মানবে হার, আবার তৃণমূল সরকার’। এই স্লোগানেই বিজেপিকে মোকাবিলার বার্তা দিচ্ছে শাসকদল।
সম্প্রতি নদিয়ার তাহেরপুরে ফোন-বক্তৃতায় বিজেপির স্লোগান ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই প্রসঙ্গ টেনে অভিষেকের কটাক্ষ, বিজেপির রাজনীতি ভয় দেখানোর। তাঁর কথায়, বাংলার মানুষ আত্মসমর্পণের রাজনীতি মানে না; তারা উন্নয়ন আর সম্মানের রাজনীতিকেই বেছে নেয়।
দলীয় পরিকল্পনা অনুযায়ী, জানুয়ারি মাস থেকেই নিজে জেলা সফরে নামবেন অভিষেক। তার আগে শুক্রবার সমস্ত বিধানসভা কেন্দ্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করে কর্মসূচির নীলনকশা চূড়ান্ত করেন তিনি। সিদ্ধান্ত হয়েছে, প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রে তিনটি করে দল কাজ করবে। প্রতিটি দলে থাকবেন ৫ থেকে ১০ জন সদস্য—বিধায়ক, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, পুরপ্রধান এবং ব্লক স্তরের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা।


এ ছাড়াও প্রায় ১,৮০০ জন ‘প্রভাবী’ ব্যক্তিত্বকে চিহ্নিত করেছে তৃণমূল। তাঁদের মধ্যে ২০০ জনের কাছে সরাসরি যাবেন মন্ত্রী ও সাংসদেরা। বাকি প্রভাবীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন বিধায়ক ও জেলা নেতৃত্ব। এই প্রভাবীদের হাতেও পৌঁছে দেওয়া হবে ‘উন্নয়নের পাঁচালি’ কিট।
লোকসভা ভোটের সময় থেকেই বিজেপিকে উন্নয়নের রিপোর্ট কার্ড প্রকাশের চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আসছে তৃণমূল। দলীয় বৈঠকে সেই প্রসঙ্গ তুলে অভিষেক বলেন, তৃণমূলই একমাত্র দল যারা কাজের হিসাব নিয়ে মানুষের কাছে যেতে ভয় পায় না। তাঁর দাবি, কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিষয়টিও মানুষকে জানানো হবে—বিশেষ করে ১০০ দিনের কাজ ও অন্যান্য প্রকল্পে অর্থ আটকে রাখার অভিযোগ।

সব মিলিয়ে, ২০২৬-এর আগে রাজনীতির ময়দানে তৃণমূল যে আক্রমণাত্মক ও সংগঠিত কৌশলেই এগোতে চাইছে, ‘উন্নয়নের সংলাপ’ তারই স্পষ্ট ইঙ্গিত।







