নদিয়ার হাঁসখালি গণধর্ষণ ও নাবালিকা খুনের ঘটনায় অবশেষে কড়া শাস্তির রায়। দীর্ঘ বিচারপ্রক্রিয়ার শেষে মঙ্গলবার রানাঘাট মহকুমা আদালত তৃণমূল নেতার পুত্র-সহ তিন জনকে আমৃত্যু কারাদণ্ডে দণ্ডিত করল। একই মামলায় অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা-সহ আরও কয়েক জনের বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ডও ঘোষণা করা হয়েছে।
এই রায় ফের মনে করিয়ে দিল ২০২২ সালের সেই বিভীষিকাময় ঘটনাকে, যা রাজ্যজুড়ে তীব্র আলোড়ন ফেলেছিল। রাজনৈতিক প্রভাব, পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ এবং শেষ পর্যন্ত সিবিআই তদন্ত—সব মিলিয়ে এই মামলাটি ছিল অত্যন্ত সংবেদনশীল।

কারা পেলেন কী সাজা?
সোমবার মামলার ৯ জন অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল আদালত। মঙ্গলবার বিচারক শাস্তির ঘোষণা করেন।
-
আমৃত্যু কারাদণ্ড:
-
সোহেল (ব্রজ) গয়ালি — তৃণমূল নেতার পুত্র
-
প্রভাকর পোদ্দার
-
রণজিৎ মল্লিক
-
-
৫ বছরের কারাদণ্ড:
-
তৃণমূল নেতা সমরেন্দ্র গয়ালি
-
দীপ্ত গয়ালি
-
আরও এক অভিযুক্ত
-
-
৩ বছরের কারাদণ্ড:
-
অংশুমান বাগচী
-
অভিযোগ: নির্যাতিতার পরিবারকে ভয় দেখানো, দেহ শ্মশানে নিয়ে যেতে বাধ্য করা ও ষড়যন্ত্রে যুক্ত থাকা
-
-
এছাড়া, মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া দুই নাবালককে শর্তসাপেক্ষে জামিন দিয়েছে আদালত। আগামী এক বছরের মধ্যে তারা কোনও অপরাধমূলক কাজে যুক্ত হতে পারবে না।
কী হয়েছিল হাঁসখালিতে?
২০২২ সালের ১০ এপ্রিল নদিয়ার হাঁসখালি থানায় গণধর্ষণের অভিযোগ দায়ের হয়। অভিযোগে বলা হয়, ৫ এপ্রিল স্থানীয় এক তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যের পুত্রের জন্মদিনের পার্টিতে নিমন্ত্রিত এক নাবালিকাকে গণধর্ষণ করা হয়।
অভিযোগ অনুযায়ী—
-
পঞ্চায়েত সদস্যের পুত্র ও তার কয়েক জন বন্ধু মিলে নাবালিকাকে গণধর্ষণ করে
-
রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে বাড়ির সামনে ফেলে রাখা হয়
-
পরে নাবালিকার মৃত্যু হলে প্রমাণ লোপাটের উদ্দেশ্যে দ্রুত দেহ সৎকার করা হয়
এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই গোটা রাজ্যে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদ শুরু হয়।
সিবিআই তদন্তে গড়াল মামলা
নির্যাতিতার পরিবার প্রথমে হাঁসখালি থানায় অভিযোগ দায়ের করলেও, পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা করেন তাঁরা।
হাই কোর্টের নির্দেশে—
-
মামলার তদন্তভার যায় সিবিআইয়ের হাতে
-
নির্যাতিতার পরিবারকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার নির্দেশ দেওয়া হয়
-
সিবিআই চার্জশিট পেশ করে
দীর্ঘ শুনানির পর রানাঘাট মহকুমা আদালত এই মামলায় ৯ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে এবং মঙ্গলবার শাস্তি ঘোষণা করা হয়।
হাঁসখালি গণধর্ষণ ও নাবালিকা খুন মামলায় আদালতের এই রায় শুধু একটি শাস্তির ঘোষণা নয়, বরং সমাজের কাছে একটি শক্ত বার্তা। রাজনৈতিক পরিচয় বা প্রভাব কোনও অপরাধকে আড়াল করতে পারে না—এই রায় ফের তা স্পষ্ট করে দিল।









