দেশের নানা প্রান্তে দলিত ও সংখ্যালঘুদের উপর হিংসার অভিযোগ ঘিরে রাজনৈতিক উত্তাপ যখন বাড়ছে, ঠিক তখনই অতীতের এক তাৎপর্যপূর্ণ মুহূর্ত সামনে এনে বার্তা দিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক Abhishek Banerjee। শুক্রবার তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গার পরের একটি ভিডিয়ো শেয়ার করেন, যেখানে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী Atal Bihari Vajpayee প্রকাশ্যে মুখ্যমন্ত্রী Narendra Modi-কে ‘রাজধর্ম পালন’-এর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন।
ভিডিয়োর সঙ্গে অভিষেক লেখেন, “ভারতের সামাজিক পরিবেশকে ইচ্ছাকৃত ভাবে বিষিয়ে তোলা হচ্ছে।” যদিও তিনি কোনও নির্দিষ্ট ঘটনার নাম উল্লেখ করেননি, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন রাজ্যে দলিত নিগ্রহ, সংখ্যালঘুদের উপর হামলা এবং ‘বাংলাদেশি সন্দেহে’ বাঙালিদের উপর আক্রমণের ঘটনাই তাঁর বক্তব্যের প্রেক্ষাপট।

সম্প্রতি ওডিশায় মুর্শিদাবাদের যুবক জুয়েল শেখকে বাংলাদেশি সন্দেহে গণপিটুনি দিয়ে খুন করার অভিযোগ সামনে এসেছে। একই ধরনের অভিযোগ উঠেছে কেরালায় পরিযায়ী শ্রমিক রামনারায়ণ বাঘেলের মৃত্যুর ঘটনায়। এই সব ঘটনার প্রেক্ষিতে বিভিন্ন রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা ও সংখ্যালঘু নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন জোরদার হয়েছে।
এক্স (পূর্বতন টুইটার)-এ দেওয়া পোস্টে অভিষেক লেখেন, “ক্ষমতার জোরে বলীয়ান হয়ে ডানপন্থী শক্তিগুলি দলিত, আদিবাসী ও সংখ্যালঘুদের উপর প্রকাশ্য হামলা চালাচ্ছে। ধর্মের মোড়কে হুমকি, ঘৃণা ও গণপিটুনির রাজনীতি চলছে।” তাঁর অভিযোগ, এই ধরনের ঘটনা মূলত বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতেই বেশি দেখা যাচ্ছে।
পদ্ম শিবিরকে কটাক্ষ করে অভিষেক আরও বলেন, “যখন ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিরাই হিংসার সঙ্গে যুক্ত হন, এবং অপরাধে জড়িতদের পুরস্কৃত করা হয়, তখন দোষীদের শাস্তি হয় না। সেটাই ধীরে ধীরে রাষ্ট্রের নীতিতে পরিণত হয়।” তাঁর মতে, এই প্রবণতা সংবিধানবিরোধী এবং ভারতের ‘বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য’-র মূল ভাবনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।


যে ভিডিয়োটি তিনি শেয়ার করেছেন, তা ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। গুজরাট দাঙ্গার পর সাংবাদিক সম্মেলনে বাজপেয়ী বলেছিলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর জন্য আমার একটাই বার্তা—উনি রাজধর্ম পালন করুন। শাসকের কাছে জাতি, ধর্ম বা সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে ভেদাভেদ চলতে পারে না।” পাশে দাঁড়ানো মোদী তখন অস্বস্তির সঙ্গে বলেছিলেন, “আমিও তাই করছি।” বাজপেয়ীর জবাব ছিল, “আমার বিশ্বাস, নরেন্দ্রভাই সেটাই করছেন।”
উল্লেখযোগ্য ভাবে, ২৫ ডিসেম্বর ছিল অটলবিহারী বাজপেয়ীর জন্মদিন। তার ঠিক পরের দিন এই ভিডিয়ো পোস্ট করায় অভিষেকের রাজনৈতিক বার্তা আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। অতীতের ‘রাজধর্ম’-এর স্মৃতি টেনে এনে বর্তমান পরিস্থিতির দিকে নজর ঘোরানোর এই প্রয়াস আগামী দিনে কী প্রভাব ফেলে, সেটাই এখন দেখার।








