অর্ক সানা, সম্পাদক(নজরবন্দি): দেশের প্রধানমন্ত্রীর পদে একজন কমিউনিস্টের বসার সুযোগ হয়েছিল। কিন্তু দলের ঊর্দ্ধে উঠে প্রধানমন্ত্রী হতে পারেননি জ্যোতি বসু। পরে বলেছিলেন ঐতিহাসিক ভুল। বিজেপি-RSS কে জ্যোতি বসু বলতেন বর্বরদের দল। শুধু জ্যোতি বসু কেন ঐতিহাসিক ভুলের প্রসঙ্গে লিখতে গেলে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় কে ভুলি কিভাবে! UPA-1 কে বাইরে থেকে সমর্থন করে বামেরা যখন ৬১ জন সাংসদ দিয়ে কংগ্রেসের পাশে দাঁড়িয়েছিল, তখন লোকসভার স্পিকার পদে বসানো হয়েছিল সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে।
আরও পড়ুনঃ ‘আরও ভালো প্রার্থী হতে পারত’, বিরোধী প্রার্থী নিয়ে মত বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যের
কিন্তু পরমানু চুক্তির বিরোধিতা করে সেই সরকারের ওপর থেকে সমর্থন তুলে নেয় বামেরা। টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যে কোনমতে সরকার কে সামলে নেয় কংগ্রেস। দলের নির্দেশ মেনে সোমনাথ বাবু সেদিন স্পিকার পদ থেকে পদত্যাগ না করায় তাঁর গায়ে দলবিরোধী কাজের তকমা লাগিয়ে দেয় সিপিআইএম। দলের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়, কংগ্রেসের সাথে গোপনে যোগসাজশ রেখে চলেছেন সোমনাথ।
সবাই জানতেন সেকথা মিথ্যে, কিন্তু নিজেদের পরম্পরা বজায় রেখে সোমনাথ বাবুর মত কমিউনিস্ট নেতাকেও রেয়াত করেনি সিপিআইএম। পরবর্তীকালে দেখা যায় সেই কংগ্রেসের সাথে সরাসরি জোট করে লড়ছে লাল ঝান্ডার পার্টি। বুদ্ধ বাবুর সাথে একই মালার ভেতরে রাহুল গান্ধীর সেই ছবি আজও গুগল সার্চে পাওয়া যায়। পার্ক সার্কাস ময়দানে সেদিন সার্কাস দেখেছিল বাম সমর্থকরা।

পরে ক্রমান্বয়ে যা হওয়ার তাই হয়েছিল, ‘শ্রেণীশত্রু’ কংগ্রেস কে গলার মালা করে একের পর এক ভোটে লড়েছে বাংলার সিপিআইএম। ২০১৬ নির্বাচনে বিরোধী দলের তকমা কংগ্রেসকে কার্যত ‘গিফট’ করে পরের নির্বাচনে অর্থাৎ ২০২১ সালে বিধানসভায় শূন্য হয়ে যায় সিপিআইএম, তাঁর সাথে অন্য বাম দলগুলোও। পরে মনে হয় ভুল হয়েছে, যেটা ভাবতে সময় লাগে ১০ বছর। বিধানসভার পর উপনির্বাচন গুলোতে কংগ্রেসের হাত ছেড়ে লড়ে সাফল্য পায় সিপিআইএম। উচ্ছসিত হয় সমর্থকরা। কিন্তু সমর্থকদের সেই উচ্ছাস সম্ভবত স্থায়ী হবেনা। কারন পার্টি কংগ্রেসে ইতিমধ্যেই ঘুরিয়ে লোকসভায় জোট বার্তা দেওয়া হয়েছে কংগ্রেসকে।
ঘুরিয়ে কেন? সরাসরি RSS-কে সমর্থন করুন, যশবন্ত নয় ভোট দিন দ্রৌপদীকে! বামেদের বলছি
এই সব প্রসঙ্গ থাক, এখন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আসন্ন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হবে আর বামেদের নিয়ে বিতর্ক থাকবে না তা কি হয়? বাজপেয়ী জমানায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিশ্ববরেণ্য বিজ্ঞানী আবদুল কালামের নিশ্চিত জয় জেনেও লক্ষ্মী সায়গলকে প্রার্থী করেছিল বামেরা। কারন ছিল আরএসএসের বিরোধীতা করা। এবারেও সেই একই পদক্ষেপ। আরএসএসের বিরোধীতা করতে গিয়ে অন্য একজন কট্টর আরএসএস ভক্ত তথা প্রাক্তন নেতাকে রাষ্ট্রপতি পদে বসানোর জন্যে তৃণমূলের সাথে জোট বাঁধল সিপিআইএম। সমর্থকরা আনন্দ পাচ্ছেন?
যশবন্ত সিনহা কে নিয়ে আমি লিখলে আপনারা জানবেন তাতো নয়। এমনিতেই জানেন, তবুও ২-১ লাইন না লিখলেই নয়। সংক্ষেপে তীব্র হিন্দুত্ববাদী নেতা যশবন্তের কেরিয়ারের দিকে তাকালে দেখা যাবে,কি দেখা যায়? চন্দ্রশেখর মন্ত্রিসভার অর্থমন্ত্রী হয়েছিলেন যশবন্ত। তারপর বিজেপিতে যোগ দেন, ১৯৯৬ সালে বিজেপি-র জাতীয় মুখপাত্র হন, অটলবিহারী বাজপেয়ী মন্ত্রিসভার অর্থমন্ত্রী হন। কিছুদিন আগে তৃণমূলে যোগ দেন। হিন্দুত্বের জিগির তোলা নেতা যশবন্তের ট্যুইটার হ্যান্ডেল সার্চ করলেই পেয়ে যাবেন তিনি দ্রৌপদী মুর্মুর থেকেও অনেক বড় RSS ভক্ত। সেই কারনেই সহজ ভাষায় আমার বক্তব্য, ঘুরিয়ে কেন? সরাসরি RSS-কে সমর্থন করুন, যশবন্ত নয় ভোট দিন দ্রৌপদীকে! বামেদের বলছি