নজরবন্দি ব্যুরোঃ মমতা সরকারে আস্থা নেই, বিরোধীদের স্মরণ নিলেন হাজারো টেট উত্তীর্ণ। বছরের পর বছর আটকে রেখে দেওয়া হয়েছে প্রশিক্ষিত প্রাথমিক টেট উত্তীর্ণদের নিয়োগ! রাজ্য সরকার ঠুঁটো জগন্নাথ, হস্তক্ষেপ চেয়ে মরিয়া চাকরিপ্রার্থীরা বিরোধী জনপ্রতিনিধিদের শরণাপন্ন হলেন। করোনা ও আমফানের আবহে সরকারী চাকুরীজীবি ছাড়া প্রায় সকলেরই জীবন জীবিকায় ছেদ পড়েছে। নতুন কর্মস্থান তো দূর অস্ত বরং কর্মহীন হয়ে পড়েছেন অসংখ্য মানুষ। দেশ ও রাজ্যের এই বেহাল পরিস্থিতিতে, দুমুঠো অন্য জোগাড়ের জন্য মরিয়া হয়ে উঠছে শ্রমজীবি মানুষ থেকে চাকুরীপ্রার্থীরা। অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে প্রায়শই বিদ্রোহের আগুন জ্বলে উঠছে তিতিবিরিক্ত প্রাথমিক টেট উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মধ্যে।
আরও পড়ুনঃ পিছিয়ে গেল আপারের শুনানি; ন্যায় বিচার হবে, আমরা প্রস্তুতঃ বিকাশ ভট্টাচার্য্য।
এই পরিস্থিতিতে একপ্রকার প্রায় নিরুপায় হয়ে বাড়ি থেকেই তারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নরকমভাবে প্রতিবাদ কর্মসূচী গ্রহণ করছে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য। কখনো তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টার বিদ্রোহ করছে্ন, কখনো বা মুখ্যমন্ত্রী-শিক্ষামন্ত্রীর ওয়ালে গিয়ে ক্ষোভ উগড়ে দিচ্ছেন। কিন্তু এত কিছু করা সত্ত্বেও অসহায় বেকারদের প্রতি কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই তৃণমূল সরকারের; দিনের পর দিন বহু আর্জি জানানো সত্ত্বেও, বঞ্চিত চাকরি প্রার্থীদের আবেদনের প্রতি কোনো কর্ণপাত করছে না রাজ্য সরকার। রাজ্য সরকারের এই নিষ্ঠুর দীর্ঘ অবহেলা ও বঞ্চনায় বিক্ষুব্ধ প্রায় ১২০০ প্রশিক্ষিত প্রাথমিক টেট উত্তীর্ণ প্রার্থী হস্তক্ষেপ চেয়ে এবার সমস্ত শাসকবিরোধী জনপ্রতিনিধিদের শরণাপন্ন হলেন।
তবে কোনো সরকারি দফতর, শিক্ষামন্ত্রী কিংবা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে নয়, এবার পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিরুদ্ধে বেকারদের ক্ষোভ গিয়ে আছড়ে পড়লো সরাসরি সুজন চক্রবর্তী, অধীর চৌধুরী, বাবুল সুপ্রিয়, দিলীপ ঘোষ- সহ ২০ জন শাসকবিরোধী জনপ্রতিনিধিদের কাছে। শুক্রবার প্রশিক্ষিত প্রাথমিক টেট উত্তীর্ণ প্রার্থী স্বদেশ ঘোষ ও গোলাম আহমেদসহ প্রায় পাঁচ শতাধিক টেট উত্তীর্ণ প্রার্থী “আমাদেরকে বাঁচান!” ক্যাপশনে সমস্ত বিরোধী জনপ্রতিনিধিদের কাছে WhatsApp এ গণ মেসেজ করে হস্তক্ষেপের কাতর আর্জি জানিয়েছেন। অনেকাংশের মতে ২০১৪ এর প্রাথমিক টেটে ব্যাপক দুর্ণীতির ফাঁস রুখতে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ নোটিফিকেশনে টেট পাশ সার্টিফিকেট দেওয়ার কথা উল্লেখ করেও কোনো টেট পাশ সার্টিফিকেট দেয় নি, যা NCTE – নিয়মেরও পরিপন্থী; কারণ NCTE নিয়মে স্পষ্ট উল্লেখ করা আছে একবার টেট পাশ করলে, উত্তীর্ণ প্রার্থীদের সার্টিফিকেট দিতে হবে যার মেয়াদ থাকবে ৭ বছর পর্যন্ত।
কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ দুর্ণীতি ফাঁস রুখতে নিজেদের কথার খিলাপ করে ও NCTE নিয়ম ভেঙে কাউকেই কোনো টেট পাশ সার্টিফিকেট দেয় নি।পরবর্তীতে নিজেদের হক আদায় করে নেওয়ার জন্য বহু প্রাথমিক টেট উত্তীর্ণ প্রার্থী বাধ্য হয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়। গত ০৮/০৪/২০১৯ তারিখে কোলকাতা হাইকোর্টে পিটিশনারদের পক্ষে রায় দিয়ে ২ মাসের মধ্যে পর্ষদকে টেট সার্টিফিকেট দেওয়ার নির্দেশ দিলেও পর্ষদ ইচ্ছাকৃতভাবে বিষয়টিকে এড়িয়ে যাবার জন্য ও সময় কাটানোর জন্য ডিভিশান বেঞ্চে চ্যালেঞ্জ করে মামলাটিকে ফেলে রেখে দিয়েছে বলে অভিযোগ। আর এখানেই প্রশ্ন দানা বাঁধছে সরকার যদি কর্মপ্রাথীদের প্রতি এতটাই সহানুভূতিশীল হয় তাহলে কেনো এত টালবাহানা করে কারোর হকের জিনিস নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে?
টেট উত্তীর্ণ ও প্রশিক্ষিত প্রার্থী ঐক্য মঞ্চের পক্ষ থেকে বাপন বিশ্বাস জানিয়েছেন সংবাদমাধ্যমে শিক্ষামন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন প্রশিক্ষিত প্রার্থীদের পরেই নিয়োগে প্রশিক্ষণরতদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে, সেই অনুযায়ী সেই সময়ে একমাত্র ২০১৪-২০১৬ ও ২০১৫-২০১৭ এই দুটি ব্যাচই প্রশিক্ষণরত অবস্থায় ছিলো, কিন্তু সরকারী প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে পর্ষদ অর্ধপ্রশিক্ষিতদের নিয়োগে সুযোগ না দিয়ে প্রচুর অপ্রশিক্ষিত প্রার্থী নিয়োগ করেছে। পরবর্তীকালে একটা বিজ্ঞপ্তি জারির মাধ্যমে ২০১৪-২০১৬ ব্যাচ ও RCI স্বীকৃত ২০১৫-২০১৭ ডি এড ব্যাচকে নিয়োগ পর্বের আওতায় আনা হলেও পর্ষদ বেআইনিভাবে পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ অধীনস্থ ২০১৫-২০১৭ ব্যাচকে সম্পূর্ণভাবে বঞ্চিত করেছে। তাঁরা ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে বলেছেন, বাইরের বোর্ড থেকে যারা ১৫-১৭ সেশনে ট্রেনিং করেছে পর্ষদ তাদেরকে চাকরি দিয়ে দিয়েছে অথচ পর্ষদ তার নিজের বোর্ডে থেকে যারা ওই একই সেশনে ট্রেনিং সম্পন্ন করেছে তাদেরকে সেই সুযোগ দেয় নি। এখানেই পর্ষদের বিরুদ্ধে দ্বিচারিতা করার মারাত্মক অভিযোগ উঠছে। পর্ষদের এই নিষ্ঠুর দ্বিমুখী নীতির প্রতিবাদে ১৫-১৭ সেশনে প্রায় ৩০০ জন প্রশিক্ষিত টেট পাশ বঞ্চিত প্রার্থীরা ক্ষোভে ফেঁটে পড়েছেন