নজরবন্দি ব্যুরোঃ নিজেদের হকের লড়ায়ে নবান্নের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলো রাজ্যের বাম যুব ছাত্ররা। বেকারত্ব, ধর্মীয় হানহানির প্রতিবাদে স্লোগান তুলেছিল নবান্নের সামনে। দেখা করতে চেয়েছিলেন মাননীয়ার সঙ্গে। দেখা মেলেনি, কিন্তু মাননীয়ার পুলিশ তাঁদের দেখা করিয়েছিলেন রাজ্যের বাস্তবের সঙ্গে। লাঠি, কাঁদানে গ্যাস, জলকামান সবকিছুতে দাবিয়ে দিতে চেয়েছিলেন হাজার হাজার গলার আওয়াজ। পুলিশের ভ্যানে করে ধরে নিয়ে গিয়েছিলেন একাধিক ছাত্রনেতাদের। লাঠির আঘাত, জেলের ঘানি টেনে যখন ক্লান্ত ভাবে ঘরে ফিরছিলেন বাকিরা, তখন নিজের বাড়ির বদলে শুধু গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল মইদুল মিদ্যা কে, গ্রামের বাড়িতেই মাটি দেওয়া হয়েছিল তাঁর। এবার মইদুল হত্যা মামলায় ২ সপ্তাহের মধ্যে সিট’কে রিপোর্ট জমার আদেশ হাইকোর্টের।
আরও পড়ুনঃদলবদলু প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যাম মুখার্জীকে নামিয়ে রথ ধোয়াল আদি-বিজেপি।
বাঁকুড়ার মইদুল গত ১১ তারিখে নবান্নে এসেছিলেন নিজেদের দাবিদাওয়া জানাতে। পেশায় টোটো চালক মইদুলের পরিবারে মা,স্ত্রী,এবং দুই সন্তান। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে মইদুল ১১ তারিখ থেকেই অসুস্থ ছিলেন পুলিশের লাঠির ঘায়ে। তারপর কয়েকদিন হাসপাতালের বেডে লড়ে সোমবার প্রাণ হারান মইদুল। রাজ্যের পুলিশের এই বর্বরোচিত আক্রমণের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার গোটা রাজ্য জুড়ে থানা ঘেরাওয়ের ডাক দিয়েছিল বাম যুব ছাত্ররা।
তার পরও বিতর্ক থামেনি। বিরোধী পার্টির নেতারা কেউ কেউ সংখ্যালঘু কার্ড নিয়ে রাজনীতি করেছেন, চারপাশে অনেকে এই সময়েও মানবিকতার রুপ দেখিয়েছেন। নিজেদের সামর্থ্য মত সাহায্য তুলে দিয়েছেন মইদুলের পরিবারের হাতে, তার মেয়েদের পড়াশনার দায়িত্ব নিয়েছেন অনেকে। তার মধ্যেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন মইদুলের স্ত্রীর চাকরির কথা। পুলিশের লাঠিতে মৃত্যু হওয়া মইদুলের স্ত্রী চাকরি পেয়েছেন পুলিশেই।
মইদুলের মৃত্যুতে প্রশ্ন উঠেছিল একাধিক। পুলিশের অতিসক্রিয়তা এবংমানবধিকার লঙ্ঘনের অপরাধে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে জনস্বার্থে মামলা করা হয়েছিল পুলিশের নামে। রাজের শাসক দল তার পরিবারকে সাহায্য করেছেন। কিন্তু পুলিশের লাঠিতেই যে মৃত্যু হয়েছে মইদুলের সেই তথ্যের বিচারের জন্য ৭ সদস্যের একটি স্পেশ্যাল ইনভেস্টিগেশন টিম গঠন করেছিল লালবাজার।
মইদুল হত্যা মামলায় ২ সপ্তাহের মধ্যে সিট’কে রিপোর্ট জমার আদেশ হাইকোর্টের। বক্তব্য ছিল বিভিন্ন ফুটেজে বারবার মইদুলকে কাতরাতে দেখা গেছে, কিন্তু কোথাও দেখা যায়নি পুলিশ লাঠিচার্জ করছে তাঁর ওপর। জানবাজারে আসার আগেরও কোন ফুটেজ পাওয়া যায়নি। এসবের মধ্যেই মইদুল মামলার প্রথম শুনানি ছিল আজ। হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যে সম্পুর্ন তদন্ত করতে হবে সিট’কে, আগামী ১২ ই মার্চ মইদুল মামলার পরবর্তি শুনানি।