নজরবন্দি ব্যুরোঃ খুনের মামলা থেকে গননা স্থগিত, মাদ্রাস হাইকোর্টের চরম তিরস্কারের মুখে নির্বাচন কমিশন। কলকাতা হাইকোর্টের পর মাদ্রাস হাইকোর্ট। লাগামহীন করোনা পরিস্থিতি নিয়ে কমিশন ফের তীব্র তিরস্কারের সম্মুখীন হল। শুধু তাই নয় কমিশনের আধিকারিকদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করা উচিত এমন কড়া মন্তব্যও করেছেন মাদ্রাজ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে ২ রা মে নির্বাচনের ফল ঘোষণাতেও স্থগিতাদেশ দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে হাইকোর্ট।
আরও পড়ুনঃ করোনা নিয়ন্ত্রনে সরকারের ভূমিকার চরম সমালোচনা খোদ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর স্বামীর।
প্রসঙ্গত পশ্চিমঙ্গ সহ যে পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন চলছে, তার মধ্য়ে রয়েছে তামিলনাড়ুও। তবে তামিলনাড়ুতে একদফায় গত ৬ এপ্রিল ভোট গণনা শেষ হয়েছে। ফলপ্রকাশ হবে আগামী ২ মে। কমিশনকে তীব্র ভর্ত্সনা করে মাদ্রাজ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সেনথিলকুমার রামমূর্তির ডিভিশন বেঞ্চ বলে, “আজকে দেশে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তার জন্য় একমাত্র আপনারাই দায়ী। আপনারা নিজেদের হাতে থাকা কোনও ক্ষমতারই প্রয়োগ করেননি । করোনা বিধি মানার জন্য বার বার এই আদালত আপনাদের সতর্ক করেছে, কিন্তু তার পরেও বিধি ভেঙে সভা, মিছিল করার জন্য কোনও রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে আপনারা পদক্ষেপ করেননি।” এরপরেই তাঁরা জানান “ভোট গণনা নিয়ে ৩০ এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচন কমিশন কী পদক্ষেপ নিয়েছে, সেটা সঠিক হয়েছে কী না , সেটা না জানালে আমরা আপনাদের আশ্বস্ত করছি যে ২ মে ভোট গণনা বন্ধ করে দেব। যাতে আপনাদের অপদার্থতার মাশুল এই রাজ্যকে আর না দিতে হয়।”
এখানেই না থেমে হাইকোর্টের সংযোজন “করোনার দ্বিতীয় ঢেউ বৃদ্ধির জন্য দায়ী একমাত্র নির্বাচন কমিশনই। কমিশনের অফিসারদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু হওয়া উচিত”। আদালত পর্যবেক্ষণে আরও জানিয়েছে, কোনও অবস্থাতেই ২ তারিখের ভোট গণনার কারণে তামিলনাড়ুর করোনা সংক্রমণের হার আর বাড়তে দেওয়া হবে না। প্রয়োজনে পর্যায়ক্রমে ফলপ্রকাশের কথাও বলেন বিচারপতিরা। আদালত জানায়, “এই মুহূর্তে জনস্বাস্থ্যের বিষয়টিই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে এই কথা মনে করিয়ে দিতে হচ্ছে, তা হতাশাজনক।”
প্রসঙ্গত তামিলনাড়ুর পরিবহণ মন্ত্রী এম আর বিজয়ভাস্করের করা একটি আবেদনের শুনানি চলাকালীনই এই পর্যবেক্ষণের কথা জানায় আদালত। বিজয়ভাস্কর দাবি করেছিলেন, তামিলনাড়ুর কারুর বিধানসভা কেন্দ্রের ভোট গণনায় স্বচ্ছতা বজায় রাখতে কমিশন যাতে পদক্ষেপ করে, তা নিশ্চিত করুক আদালত। কারণ, ওই কেন্দ্রে মোট ৭৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আজ আদালতে শুনানির সময় কমিশনের আইনজীবী সওয়াল করেন যে, “করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।” এর জবাবে আদালত বলে, “যখন এই সব সভা, সমাবেশ চলছিল, তখন কি আপনারা অন্য গ্রহে ছিলেন?”
খুনের মামলা থেকে গননা স্থগিত, মাদ্রাস হাইকোর্টের চরম তিরস্কারের মুখে নির্বাচন কমিশন। এই প্রসঙ্গে আদালতের পর্যবেক্ষণ, জনস্বাস্থ্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং এই বিষয়টি যে একটি সাংবিধানিক সংস্থাকে স্মরণ করিয়ে দিতে হচ্ছে, এটাই আক্ষেপের বিষয়। কেউ বেঁচে থাকলে তবেই তো গণতান্ত্রিক অধিকার ভোগ করতে পারবেন। তীব্র তিরস্কারের মুখে কার্যত কোণঠাসা কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন।