নজরবন্দি ব্যুরোঃ ছন্দে বাঁচে মানুষ! মানুষ লড়াইয়ে বাঁচে কথাটা যতটা সত্যি,ততটাই সত্যি বোধহয় এই কথাটাও । একটা ছন্দ, একটা কথা মানুষকে তুলে এনে দাঁড় করিয়ে দিতেই পারে আবার আগের জায়গায়। আর এই কথা গুলো এই মুহুর্তে ভীষণ ভাবে সত্যি হয়ে উঠছে বাংলায় বামেদের মিছিলে। ২১ এর নির্বাচনে বামেরা শুরু করছে ৭ থেকে ১০০এর দিকের পথ হাঁটায়। লড়াইয়ে প্রতি দল নিজেদের মত অরে গান বাঁধছে, কেউ কেউ চটকদারী স্লোগান আনছে, কেউ ফ্যাসীবাদী গানের সুর থেকে গান বানাচ্ছে নিজেদের জন্য। এসবের মাঝেই বামেরা আনল নিজেদের নতুন ঝলক। আর হাজার বিতর্কের মাঝেও সেই গানের শুরেই নতুন বিশ্বাস নিয়ে ফিরছে পুরনো বামেরা।
আরও পড়ুনঃ চাকরির নামে MLA’র প্রতারণা, দ্রুত বিচার চেয়ে মমতাকে চিঠি অশোক ভট্টাচার্যর।
বামপক্ষে বিপ্লবের আধুনিক সুর, হাট-বাজার বা চায়ের ঠেক পেরিয়ে টুম্পা এবার দেওয়াল লিখনে। একদিকে যখন ২৮শে ফেব্রুয়ারী ব্রিগেডের সমর্থনে সিপিআইএম’র বাজার মিটিংয়ের পরে টুম্পা বাজছে ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের জজ বাবুর বাজারে। তখন আরএসপি-র যুব সংগঠন আরওয়াইএফ দেওয়ালে ফুটিয়ে তুলছে টুম্পাকে। বক্তব্য একটাই, “তোকে নিয়ে ব্রিগেড যাব টুম্পা।” সোশ্যাল মিডিয়ার ওয়ালে ঘুরছে, “যে টুম্পার জ্বলছে পেট / ঘুষ না দেওয়ায় পায়নি টেট/ সেই টুম্পা দিচ্ছে ডাক / সব টুম্পা ব্রিগেড যাক!” আর এই সুরে একাধিক জায়গায় নতুন ভাবে হাল ফিরছে বামেদের।
৩৪ বছর শাসনের পর বামেরা বাংলায় বিরোধী দল হিসেবে ছিল। গত লোকসভা ভোটের পর তাঁদের সেই জায়গা নিয়েছে বিজেপি। রাজ্যের আরও অনেক জায়গার মতই এক্সময়ে দাপিয়ে ব্যাটিং করার পর গত কয়েক বছরে সকাল থেকে বিকেল কখনই সেভাবে উড়তে দেখা যায়নি লাল পতাকাকে। এমনিত্নিতেলকে চেনে সন্ত্রাস কবলিত কেশপুর বলে। তবে ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ১ লাখ ১ হাজার ভোটে তৃণমূলের শিউলি সাহা জেতার পর বামেরা আর সেভাবে খাতা খুলতে পারেনি। উল্টে পুরন পাতাও বন্ধ হয়েছে একে একে। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনেও তৃণমূল প্রার্থী দীপক অধিকারীকে ৯২ হাজারের বেশি ভোটে লিড দিয়েছে কেশপুর।
যতবার কেউ গেছেন বামেদের পার্টি অফিসে, কন অলিখিত কারণে নিজেদের ঘরেই ঢুকতে পারেননি তাঁরা। কিন্তু মানুষ লড়াইয়ে বাঁচে। বেকারত্ব, জ্বালা, ধর্মীয় মেরুকরণ সবকিছু নিয়ে জেরবার জীবনে গত কয়েকমাসে ধীরে ধীরে তালা খুলছে পার্টি অফিসের। উড়ছে লাল পতাকা। আর মানুষ ছন্দে বাঁচে আরও বেশি ভাবে, এবার টুম্পা সোনা গানে লাল পতাকা উড়িয়ে মিছিল বেরল সেই কেশ পুরেই। বাম কংগ্রেস জোতের মিছিলে ছিলেন বহু মানুষ।
এদিনের কেশপুরের মিছিলে উপস্থিত ছিলেন CPIM-এর জেলা সম্পাদক তরুণ রায়, রাজ্য কমিটির সদস্য তাপস সিনহা, প্রাক্তন বিধায়ক রামেশ্বর দলুই সহ একাধিক নেতা। মিছিলে ‘টুম্পা সোনা’র সুরর নিয়ে বিজেপির নেতারা বলছেন প্রতিক্রিয়া, ‘বামফ্রন্ট তাদের নীতি আদর্শ সবই বিসর্জন দিয়েছে। কংগ্রেস তো আগেই সে কাজ সাঙ্গ করে ফেলেছিল। এখন দুই দল এক হয়েছে। তাদের মুখেই এই সব গান মানায়।’
ছন্দে বাঁচে মানুষ! বামপক্ষে বিপ্লবের আধুনিক সুর, যদিও সিপিআইএম খাতা-কলমে এই গানের দায়ভার স্বীকার করেনি। তবে সূর্যকান্ত মিশ্র তার নিজের ফেসবুক, টুইটার অ্যাকাউন্টে গানটা প্রচার করেছেন। সুজন চক্রবর্তী গান নিয়ে অনেক কথা বলেছেন। শেয়ার করেছেন শতরূপ সহ প্রায় সব বাম নেতৃত্বই। তাছাড়াও নিজের ফেসবুক পেজে শেয়ার করেছেন মহম্মদ সেলিম। তবে নিন্দা যে একেবারে হয়নি তা কিন্তু নয়। কয়েকজন নেতার খুব মুখ ভার হয়েছে। শেষ পর্যন্ত ব্রিগেড ভরাতে টুম্পা!! যদিও দমছেন না বাম কর্মীরা। একটা গানের প্যারোডি বামেদের এনে দিয়েছে লড়াইতে। সবথেকে বড় কথা তাত্বিক বাম মানসিকতা ছেড়ে সূর্যকান্ত মিশ্র রা যখন এই প্যারোডি শেয়ার করে শিলমোহর দিয়েছেন যৌবনের দূতদের তখনই সব টিভি চ্যানেল, খবরের কাগজে ব্রাত্য বাম ফিরে এসেছে টাইমলাইনে। আর ফিরে আসছে হাজার হাজার কর্মী সমর্থক। শূন্য পার্টি অফিসের সামনে উড়ছে লাল পতাকা।