নজরবন্দি ব্যুরো: রেল বেসরকারিকরণের পথে আরও একধাপ এগালো নরেন্দ্র মোদির সরকার। জিএসটির ফাঁদে জড়িয়ে রেলের হকার উচ্ছেদের সিদ্ধান্তের জেরে মাথায় হাত হকার এবং ক্রেতাদের। সম্প্রতি মোদি সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, লোকাল ট্রেনের নিত্যযাত্রীদের কাছে যারা ৫, ১০ টাকার মূল্যে চিপস, বাদাম, গাঠিয়া, চানাচুর, ঝালমুড়ি তুলে দেয় এবার থেকে ওই সমস্ত হকারেরা আর ট্রেনে বিক্রি করতে পারবে না। সমস্তটাই তুলে দেওয়া হবে নয়ডার এক কর্পোরেট সংস্থার হাতে। কেন্দ্রের এই তুঘলকি সিদ্ধান্তের জেরে মাথায় হাত পড়তে চলেছে হকারদের, সঙ্গে ক্রেতাদেরও। কেননা লোকাল ট্রেনে এবার থেকে ব্যক্তি মালিকানায় থাকা বিক্রেতাদের কাছ থেকে খাওয়ার কিনলে সঙ্গে দিতে হবে জিএসটি।
আরও পড়ুন:নির্মাণ শ্রমিক কল্যাণ খাতের টাকায় দুর্ঘটনাগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা! চিঠি শ্রমমন্ত্রকের
মরার ওপর খারার ঘা! হাওড়া এবং শিয়ালদহ ডিভিশন মিলিয়ে প্রায় দেড় লক্ষ হকার রয়েছে। মোদি সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে হকারদের জীবনে নেমে এসেছে ঘোর অমাবস্যা। ইতিমধ্যেই বর্ধমান থেকে চলাচলকারী বিভিন্ন স্বল্পদূরত্বের ট্রেনে হকারদের বিক্রীত যাবতীয় পণ্য বিক্রি করা শুরু করে দিয়েছে চুক্তিবদ্ধ কর্পোরেট সংস্থার লোকজন। এই নিয়ে হকারেদের সঙ্গে অশান্তিও হয়েছে।
মোদি সরকারের আমলে মানুষের জীবন জীবিকার ওপরে একের পর এক কোপ এসে পড়ছে। এই তালিকায় এবার ট্রেনে নিত্য হকার উচ্ছেদ নয়া সংযোজন। অনেক আগে থেকেই রেলে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) মডেলে জোর দেওয়া হয়েছে। এর ভিত্তিতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল মন্ত্রক এমনটাই মনে করা হচ্ছে। হকারি বন্ধ হলে রীতিমতো ভাতে মারা পড়বে পরিবারগুলো। তৃণমূল কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠনের রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় রেলের এই উচ্ছেদকে চূড়ান্ত ‘জনবিরোধী নীতি’ বলে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, উচ্ছেদের প্রতিবাদে বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলন শুরু হয়েছে। এরপর আন্দোলনকে আরও বৃহত্তর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হবে।

মন্ত্রকের এই সিদ্ধান্তের ফলে দেখা যাচ্ছে, রেলের নিত্যদিনের যাবতীয় ব্যবহার করতে হবে এমন জিনিসগুলো অধিকাংশই ব্যক্তি মালিকানার হাতে তুলে দিয়েছে রেল। এবার হকারিতেও কোপ এসে পরলো। শুধু এখানেই শেষ নয়, সাম্প্রতিক সময়ে হাওড়া, শিয়ালদহের ট্রেন থেকে হকার সরানোর পরিকল্পনার পাশাপাশি বিভিন্ন স্টেশন থেকে হকার উচ্ছেদ করেছে রেল। সম্প্রতি হাওড়া স্টেশন চত্বর, সাবওয়ে সহ বিভিন্ন জায়গায় হকার উচ্ছেদ করা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে আইএনটিটিইউসির জেলা সভাপতি প্রাণকৃষ্ণ মজুমদার বলেন, কোনওরকম উচ্ছেদ চলবে না। এ নিয়ে ডিআরএমের সঙ্গে আলোচনার জন্য সময় চাওয়া হয়েছে।
জিএসটির ফাঁদে জড়িয়ে রেলের হকার উচ্ছেদের সিদ্ধান্তের জেরে মাথায় হাত হকার এবং ক্রেতাদের

আইআরসিটিসি সূত্রে খবর, বিভিন্ন দূরপাল্লার ট্রেনে ‘আ-লা-কার্টে’ মেনু হিসাবেই এমন জিনিস রাখা হয়েছে। সংস্থার তালিকায় দেখা যাচ্ছে, চিকেন কাটলেটের দাম রাখা হয়েছে ৮০ টাকা। এক্ষেত্রে একটি অর্ডারে দুটো কাটলেট দেওয়া হবে। সঙ্গে দু’স্লাইস ব্রেড এবং বাটার চিপলেট। আলুর চপও দেওয়া হবে দুটো করে। সঙ্গে মিলবে ঘুগনি। এর দাম রাখা হয়েছে ৪০ টাকা। ১০০ গ্রাম ঝালমুড়ির দাম ধরা হচ্ছে ৩০ টাকা। প্রতিটি জিনিসের মূল্য জিএসটি সমেত।