নজরবন্দি ব্যুরোঃ গত শুক্রবার রাতে নিজের বাড়ি থেকেই গ্রেফতার হয়েছিলেন রাজ্য কংগ্রেসের মুখপাত্র কৌস্তভ বাগচি। গ্রেফতার হওয়ার সময়ই এরাজ্যের শাসককে ‘স্বৈরাচারী’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেছিলেন, জামিনে মুক্ত হয়েই গ্রেফতারির প্রতিবাদে মাথা কামাবেন। তিনি আরও বলেন, “যতদিন না পর্যন্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার রাজ্য থেকে উৎখাত হয়, ততদিন মাথায় চুল গজাতে দেব না।”
আরও পড়ুনঃ আগামী বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার শিয়ালদার বিভিন্ন শাখার একাধিক লোকাল এবং প্যাসেঞ্জার ট্রেন বাতিল, দেখুন তালিকা
সেই দিন(শুক্রবার) বিকালে জামিনে মুক্ত হয়ে আদালত থেকে বেরোনোর পর সেই প্রতিশ্রুতি রেখেছিলেন আইনজীবী তথা কংগ্রেস মুখপাত্র কৌস্তভ বাগচি। ব্যাঙ্কশাল কোর্ট থেকে বেরিয়েই আদালত থেকে কিছুটা দূরে এক নাপিতের কাছে বসে মাথা কামিয়েছিলেন তিনি। উল্লেখ্য, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করার অভিযোগেই গ্রেফতার হয়েছিলেন রাজ্য কংগ্রেসের মুখপাত্র কৌস্তভ বাগচি।
এই ঘটনার পর রাজ্য রাজনিতি তোলপাড় হয়ে উঠে। কং মুখপাত্রকে বাংলার মানুষ আরও বেশি করে চিনে ফেলে। আর সেই গ্রেফতার শাসক দলকে অস্বস্তিতে ফেলে দেয়। বঙ্গে কংগ্রেসের অস্তিত্ব সেইভাবে নেই। কিন্তু সাগারদিঘির উপনির্বাচন জিতে পঞ্চায়েত ভোটের আগেই নিজেদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব জানান দিয়েছিল এই প্রাচীন দল। আর সেই সাথে যুক্ত হয়েছিল কৌস্তভ বাগচির গ্রেফতার। যা বঙ্গ রাজনীতিতে সাময়িক বিরোধীতার বাতাস পাচ্ছিল কংগ্রেস। কিন্তু রাজনীতি বড় কঠিন বস্তু।
কারন দলের হাই কম্যান্ড কং মুখপাত্রের মমতা সম্পর্কে ব্যক্তিগত কুৎসা এক্কেবারেই পছন্দ হয়নি। এই নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির কাছেও বার্তা যাচ্ছে। এর আগে হাই কোর্ট চত্বরে এআইসিসি নেতা পি চিদম্বরমের সঙ্গে দলের শৃঙ্খলা ভেঙে অসৌজন্যমূলক ব্যবহারের পরেও কৌস্তভকে সতর্ক করা হয়েছিল। এবার দিল্লি আরও কড়া। রাজ্য কংগ্রেসের একাধিক মহল থেকেও দিল্লির কাছে কৌস্তভের বিরুদ্ধে অপরিণত উগ্র ব্যক্তিকেন্দ্রিক আচরণের অভিযোগ গিয়েছে।
দিল্লি সূত্রের খবর, কৌস্তভ নিজেকে সংশোধন না করলে তাঁকে মুখপাত্র-সহ সব পদ থেকে সরানোর সিদ্ধান্ত নেবে দল। দলিয় সূত্রে খবর এই ঘটনা টা ভাল ভাবে শুনেছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী বিরক্ত। তাঁরা কৌস্তভকে চেনেন না। বিষয়টা শুনেছেন। দিল্লির কড়া বার্তা, বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যু, দুর্নীতি, সন্ত্রাস নিয়ে তৃণমূলের কড়া সমালোচনা হোক। আদালতেও আইনি লড়াই হতে পারে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীকে ব্যক্তি আক্রমণ কখনও নয়।
এই কারণে অধীর চৌধুরী, প্রদীপ ভট্টাচার্যরা কেউই কৌস্তভের বক্তব্যের পাশে দাঁড়াননি। শুধু পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করায় গ্রেপ্তারির বিরোধিতা করা হয়েছে স্বাভাবিকভাবেই। কিন্তু কেন এমন সিদ্ধান্ত নিল জাতীয় কংগ্রেস? দলের বক্তব্য হল, বামেরা কংগ্রেসের স্বাভাবিক বন্ধু নয়। আঞ্চলিক সমীকরণের সাময়িক সহযোগী। সেদিক থেকে তৃণমূল সম মনোভাবাপন্ন। পরের লোকসভা নির্বাচনের পর বিকল্প সরকারের সুযোগ এলে কংগ্রেস-তৃণমূল কাছাকাছি আসতেই পারে। তার জমি যেন নষ্ট না হয়।
মমতাকে নিয়ে ব্যক্তিগত কুৎসা, কৌস্তভের মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হাইকমান্ড, সবটাই রাজনীতি?
তাছাড়া বিজেপিকে ঠেকাতে বাংলায় তৃণমূলই কার্যকরী শক্তি। শুধু সোনিয়া, রাহুল নন, খাড়গে, চিদম্বরম-সহ বহু সিনিয়রই এবিষয়ে একমত। ফলে বাংলায় থেকে এক্ষুনি খুব বেশি করে মমতাকে চটালে আখেরে লোকসান হবে কংগ্রেসের সেটাই হল রাজনৈতিক সমীকরণ। যার কারণে দল খুব বেশি করে কং মুখপাত্রের সাথে থাকবে না এটাই স্বাভাবিক।