নজরবন্দি ব্যুরোঃ “পরীক্ষায় টুকলি করতে না পেরে মনে হয়েছিল যার নির্দেশে টুকলি করা বন্ধ হয়ে গেল, সেরকম ক্ষমতাবান আমিও হব। এই স্বপ্ন দেখতে দেখতেই জেলাশাসক হয়ে গেলাম।“মনোজ শর্মার জীবনের মোড় ঘোরানো গল্প শুনলে সকলেই চমকে ওঠে। টুকলি করে পাস না করতে পারা ছেলেটিও একদিন অনুপ্রেরনা হয়ে উঠবে তা ভাবতে পারেননি কেউই। এই ছেলেটি বাস্তবের হিরো, আইপিএস অফিসার ও যাকে নিয়ে গড়ে উঠেছে একটা গোটা গল্পের বই।
আরও পড়ুনঃ এ শহর ঋতুময়! ‘প্রসেনজিৎ ওয়েডস ঋতুপর্ণা’ নিয়ে মুখ খুললেন অভিনেত্রী
‘টুয়েলফথ ফেল, হারা ওহি জো লড়া নেহি’ যারা পড়েছেন তারা কোনওদিন ভুলতে পারেননি। ‘অ্যাস্পিরেন্ট’ দেখে মুগ্ধ হওয়া প্রজন্ম থমকে যাবে মনোজ শর্মার জীবন কাহিনী শুনে। পড়াশোনায় খুব একটা ভাল ছিলেন না মনোজ। একাদশ শ্রেণিতেও নকল করে পাশ । কিন্তু দ্বাদশ শ্রেণিতে টুকলির উপর কড়া নিষেধাজ্ঞা থাকায় সেবছর পাশ করতে পারেননি। সেদিনই জীবনের চরম সিদ্ধান্তটি নিয়ে নেন। না খুব একটা সহজ ছিল না এর পরের পথটিও।
মহকুমা শাসক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়েছিলেন মনোজ। বাড়িতে থাকলে হতো না বেশী দূর পড়াশুনা। কিন্তু পালিয়ে এসে আরও বিপদ। নতুন শহর নতুন লোকজন। কেউ দিলেন না একটা অচেনা ছেলেকে জায়গা ফলে ভিখারিদের পাশে ঠাঁই হল ছেলেটির। কয়েক দিনের জুটিয়ে নিয়েছিলেন লাইব্রেরিয়ানের কাজ, করতেন অস্থায়ী পিওনেরও কাজও। এর পরই দিল্লিতে পা দিয়ে আরোও জটিল হল জীবন। পেয়েছিলেন একটি বাড়ীতে কুকুরের পরিচর্্যার কাজ। মাসিক ৪০০ টাকার বিনিময়ে সেই কাজ করেও দিয়ে যাচ্ছিলেন সরকারী চাকরীর পরীক্ষা।
পরীক্ষায় টুকেও ফেল, পোষ্যের পরিচারক থেকে আইপিএস অফিসার, দিনবদলের কাহিনী গল্পকেও হার মানায়
কলেজ উত্তীর্ণ হওয়ার পর পুলিশের পরীক্ষায় বসেন। প্রথম প্রচেষ্টায় প্রিলিমিনারি পাশ করেন। কিন্তু চূড়ান্ত পরীক্ষায় আবার ব্যর্থতা। এসময় পাশে ছিল না বন্ধু বা পরিবার। একমাত্র হাত ধরেছিলেন একটি অচেনা মেয়ে। তিনিই তাঁর প্রেমিকা। মনোজ বলেন, “প্রেমিকাকে বলেছিলাম, তুমি যদি আমার সঙ্গে থাকো, তা হলে দুনিয়াও বদলে দিতে পারি।” প্রেমিকা ছিলেন পাশে। সাহস জুগিয়েছেন প্রত্যেক হেরে যাওয়ার গ্লানিতে। অবশেষে আসে সাফল্য। উচ্চ মাধ্যমিক ফেল করা ছেলেটিও অদ্ম্য জেদ আর মনবলের ওপর ভর করে হয়ে ওঠেন আইপিএস অফিসার। চতুর্থ বারের চেষ্টায় আইপিএস পরীক্ষায় পাশ করেছিলেন মনোজ। ২০০৫ সালে মহারাষ্ট্র ক্যাডারের আইপিএস হন মনোজ। অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হিসাবে মহারাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলে নিযুক্ত হন।