বিজেপি - তৃণমূলের সমস্যা বাড়াচ্ছে সিপিআইএম, ভবানীপুর জিতবে কে? কোন অঙ্কে?
বিজেপি - তৃণমূলের সমস্যা বাড়াচ্ছে সিপিআইএম, ভবানীপুর জিতবে কে? কোন অঙ্কে?

অর্ক সানা, সম্পাদক(নজরবন্দি): উপনির্বাচন মিটেছে হাইভোল্টেজ ভবানীপুরে। আগামীকাল ভোট গণনা। সারা রাজ্য তথা দেশের নজর এই কেন্দ্রকে ঘিরে। যেকোন ফাঁক ফোঁকর ঢাকতে ভবানীপুরের গণনাকেন্দ্র নিরাপত্তায় মুড়ে দিয়েছে কমিশন। জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। গণনা কেন্দ্রের ১০০ মিটারের মধ্যে কোনওরকম জমায়েত করা যাবে না। এমনকি কাউন্টিং স্টেশনের কাছে পাঁচ জনের বেশি দাঁড়াতে পারবেন না। কিন্তু ভবানীপুর জিতবে কে? কোন ফ্যাক্টরে?

আর পড়ুনঃ দিদি ৫০ হাজার ভোটে জিতবে, ঘোষণা ফিরহাদের। বিজেপি বলছে ‘জয় নিশ্চিত’!

ইতিমধ্যেই উভয়পক্ষ, অর্থাৎ মূল প্রতিপক্ষ তৃণমূল – বিজেপি শিবিরের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, জয়ের ব্যাপারে তাঁরা নিশ্চিত। কিন্তু কোন অঙ্কে দুই পক্ষ দাবি করছে জয়ের বিষয়ে? একটা ছোট্ট বিশ্লেষণ রইল আপনাদের জন্যে। প্রথমে ফিরে তাকানো যাক বাম সাম্রাজ্যে পতনের সালে। অর্থাৎ ২০১১। এই বছর ভবানীপুর কেন্দ্রের প্রার্থী ছিলেন সুব্রত বক্সি। বিপুল ভোটে জেতেন তিনি। প্রায় ৫০ হাজার ভোটে পরাজিত করেন সিপিআইএম প্রার্থী নারায়ন প্রসাদ জৈন কে। বিজেপি প্রার্থী সেই বছর পান ৫ হাজার ৭৮ টি ভোট।

২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ভবানীপুর থেকে উপনির্বাচনে লড়াই করেন। এইবার সিপিআইএম প্রার্থীকে প্রায় ৫৪ হাজার ভোটের ব্যাবধানে হারিয়ে দেন মমতা। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল উপনির্বাচনে প্রার্থী দেয়নি বিজেপি। এবার ২০১৬, বাম কংগ্রেসের জোট হয়। সিপিআইএম এই আসন ছেড়ে দেয় কংগ্রেস কে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জয়ী হন ঠিকই, কিন্তু মার্জিন কমে অনেকটাই। ৫ বছরের তফাতে ৫৪ হাজারের মার্জিন কমে দাঁড়ায় ২৫ হাজার ভোটে। এদিকে ভোট বাড়ে বাম কংগ্রেস জোটের।

২০১১ সালে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সিপিআইএমের নন্দিনী মুখোপাধ্যায় ভোট পেয়েছিলেন ১৯ হাজার ৪২২ টি। সেখানে দীপা দাসমুন্সী পান ৪০ হাজার ২১৯ ভোট। ব্যাপক ভোট বাড়ে বিজেপির। সুব্রত বক্সির বিরুদ্ধে ২০১১ সালে বিজেপি প্রার্থী ভোট পেয়েছিলেন মাত্র ৫ হাজার ৭৮। সেখানে ২০১৬ সালে বিজেপি প্রার্থী চন্দ্র কুমার বোস পান ২৬ হাজার ২৯৯ টি ভোট। মমতা বন্দোপাধ্যায়ের ২০১১ সালে প্রাপ্ত ৭৩ হাজার ৬৩৫ ভোট কমে দাঁড়ায় ৬৫ হাজার ৫২০ তে।

বিজেপি – তৃণমূলের সমস্যা বাড়াচ্ছে সিপিআইএম, ভবানীপুর জিতবে কে? কোন অঙ্কে?

বিজেপি - তৃণমূলের সমস্যা বাড়াচ্ছে সিপিআইএম, ভবানীপুর জিতবে কে? কোন অঙ্কে?
বিজেপি – তৃণমূলের সমস্যা বাড়াচ্ছে সিপিআইএম, ভবানীপুর জিতবে কে? কোন অঙ্কে?

এবার ২০২১ সাল, ভবানীপুর কেন্দ্রের প্রার্থী হন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। তিনি পান ৭৩ হাজার ৫০৫ টি ভোট, সেখানে বিজেপির রুদ্রনীল পান ৪৪ হাজার ৭৮৬ টি ভোট আর কংগ্রেস প্রার্থী পান ২০১১ সালে বিজেপির প্রাপ্ত ভোটের কাছাকাছি ৫ হাজার ২১১ টি ভোট। এখন উপনির্বাচনের রেজাল্টের জন্যে অপেক্ষা করছেন সবাই। ফিরহাদ হাকিম বলেছেন কমপক্ষে ৫০ হাজার ভোটে জিতবেন মমতা। কিন্তু কি বলছে অঙ্ক? আসলে বিজেপি – তৃণমূলের সমস্যা বাড়াচ্ছে সিপিআইএম।

২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় জয়ী হয়েছিলেন ২৮ হাজার ভোটে যার মধ্যে শুধু ৭৭ নম্বর ওয়ার্ডেই তৃণমূল প্রার্থী এগিয়ে ছিলেন ২১ হাজার ৩৭৯ ভোটে। অর্থাৎ বাকি ৭টি ওয়ার্ড মিলে তৃণমূল এগিয়েছিল মাত্র ৭ হাজার ভোটে। বিজেপির বাজি এখানেই। কারন সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই ওয়ার্ডে তেমন ভোট পড়েনি উপনির্বাচনে। এদিকে প্রার্থী বদলেছে অন্যপক্ষেও। কংগ্রসের জায়গায় এবার প্রার্থী দিয়েছে সিপিআইএম। ৫,২১১ ভোট পাওয়া কংগ্রেস প্রার্থীর তুলনায় যদি কিছুটা ভোটও বেশি পান সিপিআইএম প্রার্থী সেক্ষেত্রে চাপে থাকবে তৃণমূল বিজেপি উভয় পক্ষই। সুতরাং বলাই বাহুল্য, বিজেপি – তৃণমূলের সমস্যা বাড়াচ্ছে সিপিআইএম।

কারন ৭৭ নম্বর ওয়ার্ডে মূল বিধানসভা নির্বাচনের তুলনায় কম ভোট পড়েছে উপনির্বাচনে। আর ট্রেইন্ড অনুযায়ী মুসলিম ভোট বিজেপি তে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই। তাই এই ওয়ার্ড থেকে বাম প্রার্থী যদি কিছু ভোট বাড়াতে পারেন তাহলে চিন্তা বাড়বে তৃণমূলের। এদিকে শুধু ৭৭ নম্বর ওয়ার্ডই নয়, ৭১, ৭৩ ও ৮২ নম্বর ওয়ার্ডেও ভোটদানের হার খুব একটা সন্তোষজনক নয়। গত বিধানসভা নির্বাচনে ৭১ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল পেয়েছিল ৫৩ শতাংশ ভোট। বিজেপি পেয়েছিল ৪০ শতাংশ ভোট। এই ওয়ার্ডে বাঙালি হিন্দু ভোটার ৫৫ শতাংশ। অবাঙালি হিন্দু রয়েছেন ৪২ শতাংশ। ৩ শতাংশ ভোটার সংখ্যালঘু। তবে তৃণমূলের অ্যাডভান্টেজ, প্রার্থীর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অপেক্ষা রাত পোহানোর!