নজরবন্দি ব্যুরোঃ আচ্ছা, যে মানুষটার প্যাশন নাচ, তার যদি ১৬ বছর বয়সে একটি পা কেটে বাদ দিতে হয় তাহলে কি হতে পারে কখনও ভেবে দেখেছেন? পা না থাকলে সে নাচবে কিভাবে? তবে কি তার সব স্বপ্ন ধুলিস্যাৎ হয়ে যাবে এক লহমায়? নাকি সে তার অদম্য জেদ আর সাহসকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাবে? নাচকেই তার পেশা করে নেবে? এক্ষেত্রে ইনি দ্বিতীয় কাজটাই করেছিলেন। অর্থাৎ পা না থাকা সত্ত্বেও নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তর করেছিলেন। হ্যাঁ আমরা কথা বলছি সুধা চন্দ্রনকে নিয়ে। দুর্ঘটনায় ডান পা হারিয়েও আজ তিনি একজন জনপ্রিয় নৃত্যশিল্পী। সুধা চন্দ্রণ মানেই এক হার না মানার গল্প, এক অসম্ভবকে সম্ভব করার গল্প!
আরও পড়ুনঃ DA বাড়াতে চলেছে কেন্দ্র সরকার, লোকসভার আগেই সব সিদ্ধান্ত মোদীর
১৯৬৫ সালের ২১ শে সেপ্টেম্বর (মতান্তরে, ২৭) তামিলনাড়ুর তিরুচিরাপল্লীতে জন্ম হয় সুধার। যদিও তাঁর বাবা মা থাকতেন মুম্বইয়ে। ছোটবেলা থেকেই নাচের প্রতি তীব্র আকর্ষণ ছিল সুধার। আর তা দেখেই মেয়ের নাচ শেখার ব্যবস্থা করলেন সুধার বাবা, কে ডি চন্দ্রন। তিন বছর বয়সে শুরু হওয়া নাচ ক্রমশ প্যাশন হয়ে দাঁড়াল সুধার জীবনে। প্রতিদিন স্কুলের পরে নাচ শিখে তিনি গভীর রাতে বাড়ি ফিরতেন। আট বছর বয়সে মঞ্চে প্রথম অনুষ্ঠান করেন তিনি। মূলত ভরতনাট্যম নাচতেন তিনি। পড়াশোনা আর নাচ চলছিল সমান তালে। দশম শ্রেণির বোর্ডের পরীক্ষায় সুধা পেলেন ৮০ শতাংশ নম্বর। পরে তিনি অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর করেন।

সাফল্যের সিঁড়িতে পা রাখার আগেই সুধার জীবনে আসে ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্ন। ষোলোতম জন্মদিনের আগে এক দুর্ঘটনায় ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় সুধার স্বপ্ন। তিরুচিরাপল্লীতে বাস দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন তিনি। চিকিৎসকরা বাধ্য হন সুধার ডান পা হাঁচুর নিচ থেকে কেটে বাদ দিতে। নইলে তাঁর সারা দেহে পচন ধরে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। দুর্ঘটনার পরে শারীরিক আঘাতের থেকেও মানসিক আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে গিয়েছিলেন সুধা। আর কোনও দিন নাচতে পারবেন না, এই আশঙ্কায় তাঁর চোখে অন্ধকার নেমে এসেছিল। দুর্ঘটনার পরে চার মাস লেগেছিল সুধার সোজা হয়ে দাঁড়াতে। এরপর কৃত্রিম পায়ের ব্যবস্থা করেন তাঁর বাবা। ধীরে ধীরে কৃত্রিম অঙ্গকেই এগিয়ে চলার মূল মাধ্যম করে নিলেন সুধা। আবার শুরু হল নাচের তালিম।
কৃত্রিম পা নিয়ে প্রথম সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে একটি অনুষ্ঠান করলেন সুধা। সেদিন এক শিল্পীর পুনর্জন্ম দেখতে কলেজের অডিটোরিয়াম কানায় কানায় ভর্তি হয়ে যায়। ব্যস তারপর থেকে নিজের প্রতিবন্ধকতাকে নিজের শক্তি করে তুললেন সুধা। এরপর দেশে বিদেশে অজস্র শো করেছেন তিনি। নাচের পাশাপাশি সুধা অভিনয়েও সমান পারদর্শী। ১৯৮৪ সালে মুক্তি পায় সুধার জীবনের উপর তৈরি তেলুগু ছবি ‘ময়ূরী’। তিনি নিজেই অভিনয় করেন নিজের ভূমিকায়।
হার না মানা এক মানবীর গল্পঃ অনুপ্রেরণার বিকল্প নাম সুধাচন্দ্রন
‘ময়ূরী’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য সুধা জাতীয় পুরস্কারে পুরস্কৃত হন। এরপর তামিল, মালয়ালম, কন্নড়, মরাঠী, ভোজপুরি ও হিন্দিতে বেশ কয়েকটি ছিবেত অভিনয় করেছেন তিনি। তাঁর অভিনীত একমাত্র বাংলা ছবিটি হল ‘রাজনর্তকী’। বড় পর্দার পাশাপাশি টেলিভিশনেও দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেছেন তিনি। সুধার লড়াইয়ের কাহিনী স্কুলের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। গল্পের নাম ‘লৌহকঠিন মানসিকতা’।
